সবার ভালবাসার প্রতি রইল আমার হাজার সালাম। কারো ভালোবাসাকে ইঙ্গিত করে আমার এই লেখা না এটা শুধু মাত্রই আমার ব্যাক্তিগত চিন্তাধারা। ।
এখন ইন্টারনেট খুললেই অনেকের অনেক লিখনী আমাদের নজরে আসে। অনেকেই ভালবাসা টিকিয়ে রাখার জন্য, ভালবাসার মানুষটিকে কাছে পাবার জন্য ,নারীর মন কিভাবে জয় করতে হবে ,অথবা একটা নারীর কাছে কিভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে হবে এসব নিয়ে অনেক হাজার টিপস দিয়ে থাকেন। এই পর্যন্ত কত জন বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন যে এসব টিপস পরে তাদের ভালবাসার সম্পর্কটি হয়েছে ? জগতের প্রযুক্তি দিয়ে আজ অনেক কিছুই সম্ভব যেমন গর্ভবতী নারীর পেটের সন্তানটি ছেলে না মেয়ে , শরীরের কোথায় পাথর হয়েছে সবই সম্ভব কিন্তু আজ পর্যন্ত কেউকি মনের ভিতর কি আছে সেটা দেখতে পেরেছে কখনো ? কার মনে কি খেলা করছে অথবা কারো মনের কষ্ট কি কোনদিন ঔষধ দিয়ে সরানো গেছে ? আমার জানা মতে হয়ত মনের কষ্ট দেখানোর মত অথবা সেই কষ্ট দূর করার মত সাধ্য আজ প্রযুক্তি অর্জন করতে পারেনি।
আমি কয়েকজন পুরুষ মানুষের লিখা পরেছি যে কিভাবে আপনি আপনার ভালবাসার মানুষটির মন জয় করতে পারবেন। পড়ে অবাক হলাম সে কিভাবে এই টিপসগুলো লিখল ? ভাবছিলাম কোনো নারী কি তাকে বলেছিল তোমরা এই সেই করলে আমার মন জয় করা যায় ? যদিও সে কোনো নারী থেকে এই পরামর্শ নিয়ে লিখে থাকে তাহলে আমার কথা হলো সে ওই টিপসগুলো লেখার আগে তাকে বাংলাদেশের প্রায় ৭ কোটি নারী থেকে পরামর্শ নিয়ে লিখতে হবে। তারপর আমি আশা করি কারো সাথে কারো চাহিদা মিলবে না। কিভাবে আমরা ৭টি অথবা ১০টি টিপস দিয়ে তাদের মন জয় করতে পারি যেখানে ৭ কোটি নারীর ৭ কোটি ধরনের চাওয়া পাওয়া থাকতে পারে ? আর যদি সে লিখার আগে কোনো নারীর পরামর্শ ছাড়াই তাদের মন চাওয়া কি হতে পারে সেটা বোঝতে পারে তাহেল আমি বলব নিতান্তই ব্যার্থ হয়েছে তার লিখা কারণ যেখানে কথায় বলে সয়ং বিধাতাও নারীর মন বোঝতে পারে না। তো টিপস পরে কারো মন জয় করতে যাবেন না। যদি টিপস পরে কাকতালীয় ভাবে দুই একটা সম্পর্ক হয়েও যায় তখন ভালবাসার খুটিটি স্থাপিত হয় সেই টিপস দিয়েই। যখন আপনার ভালবাসার মানুষ আপনাকে বলবে যে ""জানিনা কিভাবে তোমাকে মনের অজান্তেই ভালোবেসে ফেলেছি, বুঝতে পারিনি কখন তুমি তোমার ভালবাসা দিয়ে আমার মন জয় করে নিয়েছ"" তখন আপনি কি জবাব দিবেন তাকে? এটাই কি জবাব যে আরে আমিতো ভালবাসা দিয়ে না টিপস পরে তোমার মন জয় করেছিলাম? যদি আপনি সেটা না বলেন তখন আপনাকে নিতে হবে মিথ্যার আশ্রয়। তো জানি না টিপস পরে কতদিন ভালোবাসাকে টিকিয়ে রাখা যায়।
ছেলে অথবা মেয়ে সবার মন ভিন্ন ভিন্ন আর ভালবাসা দুটি ভিন্ন হৃদয়ের মাঝেই সৃষ্টি হয়। চোখের দেখায় একটা ভালোলাগা শুরু হলে আস্তে আস্তে বিধাতার মহিমার মাঝেই দুটি হৃদয়ে জন্ম হয় ভালবাসার। আমার কাছে ভালবাসা মানে দুটি শরীর তবে হৃদয় হয় একটি। ভালবাসার সৃষ্টি হওয়ার পর একজন তার ভালবাসার মানুষটিকে ঠিক সেই রূপে দেখতে চায় যেই রূপে তাকে সম্পর্ক হওয়ার আগে থেকেই কল্পনা করে আসতেছে। কারো জীবনে ভালবাসার মানুষ না থাকলেও সে যে স্বপ্ন দেখে না সেটা ভুল। সবাই সপ্ন দেখে। যখন কেউ তার ভালবাসার মানুষ পায় তখন সে চায় এতদিন ধরে সপ্ন দেখে আসা মানুষটির মতই যেন সে হয়। যদিও পুরোপুরি হয় না তবে একজন আরেকজনকে তার মনের মত করে গড়ে তুলতে চায়। ঠিক তখন যদি আপনি আপনার ভালবাসার মানুষটির দিকে নজর না দিয়ে আমি শুধু বইয়ের ভিতর টিপস খোজতে থাকেন তাহলে আপনি টিপস পাবেন ঠিকই কিন্তু সেই টিপসগুলো ব্যাবহার করার মানুষ পাবেন না। আপনি টিপস খুজতে খুজতে হয়ত তার মনের আসল চাহিদা তা বুঝার ক্ষমতা আপনি হারিয়ে ফেলবেন।
এইত গেল ভালবাসা পাওয়ার বেপারে টিপসের ভুমিকা। এখন কিন্তু অনেক হাজার টিপস পাওয়া যায় যে ভালবাসার সম্পর্কটি নষ্ট হয়ে গেলে কি করবেন অথবা ব্রেক আপ হওয়ার পরে কিভাবে নিজেকে গুছিয়ে আনবেন তারও হাজার টিপসের ছড়াছড়ী এখন। কিন্তু আমি বোঝতে পারি না যেসব ছেলে মেয়েরা ভালবাসায় ব্যার্থ হয়ে আত্মহত্যা করছে তাদের চোখে কি সেই টিপসগুলো পরেনি ? হয়ত সেদিনের সেই টিপসগুলো পড়লে ওদের আবেগকে সে নিয়ন্ত্রণ করতে পারত এবং নুতুন করে ভালবাসার মানুষ খুঁজে নিতে পারতো। সেদিন তাদের হাতে এই টিপস পৌছালে হয়ত তাদের জীবনটা আর যেত না। হায়রে টিপস!!!!
একটি লোক গেল ডাক্তারে কাছে গিয়ে বলল ডাক্তার সাহেব আমার প্রেমিকা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে কিন্ত আমি তাকে কোনভাবেই ভুলতে পারছি না। তো ডাক্তার তাকে বলল এটা কোনো ঔষধে যাবে না। চেষ্টা কর ভুলতে দেখবা আস্তে আস্তে সব ভুলে যাবেমনকে শক্ত কর। তখন সে বলল, ডাক্তার সাহেব আমি অসুস্থ বলেই আপনার কাছে এসেছি আর আপনি বলছেন চেষ্টা করার জন্য? একজন মানুষ অসুস্থ হলে কি আর সারাজীবন সেই অসুখ থাকে নাকি? সাময়িক ভাবে যে কষ্ট সেটা দূর করার জন্য এবং এই অসুখটা যাতে চিরস্থায়ী রূপ নিতে না পারে সেজন্যই আপনার কাছে আসা। তখন রোগীর অনেক পীড়াপিড়িতে ডাক্তার তাকে ঘুমের ঔষধ দিয়ে বিদায় করে দিল। সেই মানুষটি তো মহা সুখী সে তার ভালবাসার মানুষটিকে ভুলার ঔষধ পেয়েছে তাই আর দেরী না করে সে ঔষধ খাওয়ার পর যখন দেখল ঘুম আসতেছে তখন সে ঘুমিয়ে পরল। কিন্তু সেই ঔষধে কি কোনো কাজ হয়েছিল ? না হয়নি বরং সেই ঘুমের মাঝে তার স্বপ্নে এসেছিল সে যাকে ভুলার জন্যই সে ঘুমিয়ে ছিল।
কোনো টিপসই কারো ভালবাসার মানুষটিকে ভলিয়ে দিতে পারে না কোনদিন না। ভালবাসা পাবার জন্য অথবা ভালবাসা হারিয়ে টিপস এর সহায়তা না নিয়ে নিজের প্রতি নির্ভরশীল হোন। সেই হতে পারে আপনার জীবন সঙ্গিনী যার স্বপ্ন দেখে আসছেন আপনি এতগুলো দিন ধরে। নিজেকে স্মার্ট করার টিপস আপনি নিতে পারলেও ভুলেও ভালবাসার মানুষটিকে জয় করার টিপস নিতে যাবেন না। টিপস নেওয়ার বদলে আপনার ভালবাসার মানুষটির দিকে আপনার নজরটি রাখুন। সত্যি যদি ভালোবেসে থাকেন তাহলে তার চোখের দিকে তাকালেই আপনি বোঝতে পারবেন তার চোখের ভাষা। তার চোখের দিকে তাকিয়েই পেয়ে যাবেন তাকে জয় করার সর্বশ্রেষ্ঠ টিপস। তার চোখের দিকে তাকিয়ে যখন আপনি তার মনের ভাষা বুঝতে পারবেন তখন আমার মনে হয় না আপনাকে আর কোনদিন ব্রেক আপ এর পরের টিপস খুজতে হবে কারণ আপনার চেয়ে তার জীবনে পরম আত্মীয় খুব কমই সে পাবে।
আমরা যারা টিপস ভালবাসার জন্য আমার মনে হয় টিপস লিখে আমরা যেই সময়টা নষ্ট করি সেই সময়টা যদি ভালবাসার পজিটিভ দিক গুলো তুলে ধরি তাহলে সবাই ভালবাসার সবার ভালবাসার মানুষটির দিকে নজর দিবে এবং সেই সাথে দেখা যাবে ব্রেক আপ এর ঘটনাও কমে আসছে। নিজের কাহিনী সবাইকে বুলন সেটা হোক সুখের অথবা দুঃখের। যদি সুখের হয় তাহলে সবাই আরো উত্সাহ পাবে আর যদি দুখের হয় তখন আপনার দুঃখ দেখে অন্যজন কেউ শিখবে যে কারো মনে দুঃখ দেওয়া ঠিক না।
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন