বন্ধুত্ব, ভালবাসা এসবের সংজ্ঞা দেওয়া আমার কাজ নয়। আর এসব শব্দের সংজ্ঞা দেওয়া আমার পক্ষেও সম্ভব না। এই দায়িত্ব তাদের, যাদের কালজয়ী লেখনী পড়ে আমিও আজ আমার বন্ধু সম্পর্কে কিছু লিখতে অনুপ্রেরণা পেয়েছি।
মাহমুদল হাসান লিটন, আমার জীবনের একজন গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। আমার এই লেখায় তাকে বন্ধু বলে আখ্যায়িত করতে চাই না কারণ আজ পর্যন্ত কখনো তাকে সরাসরি বন্ধু বলে ডাকা হয়নি। কখনো গালাগালি, কখনো মামা আবার কখনো তার কোনো ব্যঙ্গ নামেই তাকে ডাকা হত। সেই স্কুল জীবন থেকে শুরু করে আজও সে আমার সাথে রয়েছে সবসময়। কেমন জানি এক সভাব তার মাঝে। তার সভাবের কারণেই হয়তো আমার মনের প্রিয় মানুষটির জায়গাটা শুধু তার জন্য বরাদ্ধ। আমার জীবনের অনেকটা সময় তার সাথে কেটে গেছে আর এখনো যাচ্ছে এবং মনে হচ্ছে চলে যাবে ওর সাথেই সারাটাজীবন। আমাদের দুজনের জন্মতারিখ থেকে শুরু করে অনেক দিকেই যেন মিল রয়েছে। কেন জানি আমার চাহিদা খুব সহজেই সে পারে। আজ তাকে ফেলে আমি একা সম্পূর্ণ একা একজন মানুষ।
আমি আজ ৪ বছর ধরে প্রবাসে রয়েছি। প্রবাস জীবনের সকাল, বিকাল,সন্ধ্যা,রাত সবই আমাদের কাছে একই সমান কাটে। মফস্বলের বখাটে চঞ্চল ছেলেটিও আজ চুপচাপ জীবন কাটায় আর এটা যেন প্রবাস জীবনের ধর্ম। কাজ শেষ করে এসে ঘুমানো আবার ঘুম থেকে উঠেই আবার কাজে যাওয়া এই সূত্রে কোলে যাচ্ছে জীবন মানে আমার প্রবাস জীবন। যখন হাপিয়ে উঠি এই জীবন নিয়ে , যখন ইচ্ছে করে সব ফেলে চলে যায় আবার সেই পুরনো জীবনে তখন কি করি জানেন? হা হা হা কিছুই না। বাধ্য হয়ে সবকিছুকে ভুলে যেতে হয় কারণ পিছুটান রয়েছে কিছু জীবনে আমার।
এই হলো আমাদের সংক্ষিপ্ত পরিচয়। আজকে লিখাটার মূল উদ্দেশ্য হলো তার প্রতি আমার কিছু ক্ষোভ প্রকাশ করা। আমার এই প্রবাস জীবনে আমি শুধু এই মাহমুদুল হাসান লিটনকে পেয়েছি আমার পাশে। কেমন জানি একটা উদ্ভট অভিনেতা সে। মাঝে মাঝে যখন খুব খারাপ লাগে তখন তাকে বলি মনের দুঃখের কথা তখন সে আমার কোনো কথারই মুল্য দেয় না আমি যখন দুঃখের কথা বলি তখন সে হাসে। হেসে হেসে বলে এমন কিছু কথা বলবে যা তখনের জন্য কষ্টটা ভোলে যেতে আমি বাধ্য হয়ে যাই। আবার সুখের সংবাদ দেওয়ার পর তার মুখে হাসি থাকে না।
কিছুদিন আগে একদিন রাতে তাকে বললাম যে আমি প্রমোশন পেতে যাচ্ছি তখন সে আমাকে কিছু বলল না যেখানে সে আমার কষ্ট শুনে আমার সাথে হাসি মুখে কথা বলে আজ সে আমার খুশির সংবাদ শুনে চুপ করে থাকাতে আমি অবাক না হয়ে পারলাম না। পরক্ষনেই বোঝতে পারলাম সে কাদছে , কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর আমাকে সে বলল " মামা তুমি ভালো আছ শুনলে আমার খুব ভালো লাগে , তোমার খুশির সংবাদ শুনে কেন জানি চোখ দিয়ে পানি চলে আসল না কেদে আর পারলাম না " এই হলো মাহমুদুল হাসান লিটন।
আমার এই মানুষটার জন্য আমি মহান আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি তাকে আমার জীবনে দেওয়ার জন্য।
সেই মাহমুদুল হাসানের আর একটা কথা বলে আজকে শেষ করতে চাই।
গতসপ্তাহে একদিন নিজেকে খুব উচ্ছল মনে হলো ,মনে হলো প্রবাসে থাকলেও আজ আমার কোনো দুঃখ নেই। ফিরে পেলাম সেই মানুষটিকে যেই আমি ছিলাম পূর্বে। সেদিন যেন আসলেই অন্যান্য দিনের চেয়ে আলাদা ছিল। ভাবছিলাম আজকের দিনে তাকে খুব দরকার কারণ তার সাথে ভালোভাবে তেমন কোনো কথা হয় না। ঠিক এমন সময় আমি ডাকার আগেই যেন সে আমার কাছে আসলো তখন মনে হলো দুবাই থেকে বাংলাদেশের দুরত্ব ৫০০০ মাইল হলেও তার আর আমার বসবাস যেন একই বৃক্ষের নিচে। শেয়ার করলাম তার সাথে যে আমি আজ অনেক খুশি। কথা বলতে বলতে হঠাৎ তাকে জিগ্ঘেশ করলাম আচ্ছা মামা আজকে আমার এত খুশি লাগছে কেন ? সে আমাকে বলল এই ভাবে ""একাকিত্বের সাথে বসবাস করার কারণে আজকে তোমার এই চঞ্চলতা। মনের মাঝে চঞ্চলতা গুলো পুষে রাখতে রাখতে হাপিয়ে ওঠার কারণে আজকে মনের ভিতর চেপে রাখা কষ্টগুলোর প্রতিফলন এগুলো। তখন অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলাম তার চিরন্তন সত্য মেসেজটার দিকে আর মনে মনে বললাম হায়রে পৃথিবী আমার পাশে এমন শত মানুষ আছে যাদের কারো আমার দরকার নেই আর যার জন্য আমার বেছে থাকা তাকে রেখেছ আমার কাছ থেকে অনেক দূরে।
0 মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন