বুধবার, ৩০ এপ্রিল, ২০১৪

অনুভূতি

উত্সর্গ: শ্রদ্ধেয় ছাইরাছ হেলাল কে, যিনি পাঠক হিসেবে আমাদের পাশে রয়েছেন বিস্তৃত আকাশের মত উদার হয়ে, এখনো শক্ত করে কলম ধরে রেখেছি তারই অনুপ্রেরণায়। তার সংস্পর্শেই রয়ে যেতে চাই। আমার এই ক্ষুদ্র লিখাটি আজ তাকেই উত্সর্গ করলাম। আর হ্যাঁ আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ লিখাটি হবে তার নামেই।

=============================================================================================

প্রস্তর চাপা ঘুমটি ভেঙ্গে গেলো মাঝরাতেই, আমার কাছে তা মাঝরাত হলেও বুড়ো হাবড়াটার কাছে ভর দুপুর মনে হবে না তা কিন্তু না। যক্ষায় আক্রান্ত হয়ে দিব্যি ঘোষণা দিয়ে যাচ্ছে জব্বারের বলীখেলার। ঘোষণা শুনে অকারণেই হাসতে হাসতে লুতুপুতু শুরু করলাম, খুলে দিয়ে বন্ধ দরজাটি তাকেও জানিয়ে দিলাম আমিও 'বাঁজে বীণ নাঁচে নাগিন-এর পুরনো ভক্ত, যাবো অবশ্যই যাবো।

নিশ্ছিদ্র মস্তিষ্কের অন্দরমহলে কোয়াশিয়াটি খুব দ্রুত বেড়ে উঠেছে, এই দিকে পঞ্চপ্রদীপ জ্বালিয়ে মোটা ঠোটে ঈশ্বরোপাসনায় নিজেকে সমর্পিত করার ভাব ধরেছি অপরাঙ্মুখ হয়ে। প্রার্থনা করবো আজ, করতেই হবে, এই ভেবেই কাঁচা সন্ধ্যাতেই পদ্মাসনে বসে পরি, পরক্ষণেই মনে পড়ল প্রতিজ্ঞার কথা। আর কি দেরী করা যায়? পদ্মাসন থেকে উঠেই দিলাম ভৌ-দৌড়, ঈশ্বরতো আর অবোদ্ধা নন, জানেন সবকিছু তাছাড়া তার কাছে কি প্রার্থনা করবো সেটা এখনোতো ঠিক করিনি।

একি!! সবাই দেখি পাঁঠার মত পাঁতি ধরেছে, আমার ঠাই কোথায়? না কোথাও ঠাই নাই। উর্মির নৃত্যে সিক্ত হতে এসে দূর থেকে তার গর্জন শুনেই আহ্লাদিত করতালি বাজিয়ে অনায়াসে এগিয়ে যাই মৃত্যুকুপের দিকে। মাথার উপর রেখে অখন্ড আকাশ, আমি নিষ্পলক তাকিয়ে রয়েছি নিচের আরোহীর দিকে। ডিপফ্রিজে রেখে হৃৎপিন্ডটি এখনি মেতে উঠবে অনুরঞ্জক হয়ে সবার মনোরঞ্জনে। শুরু হলো তার সচুতরতা। হঠাৎ নজরে আসলো গা ঘেষে দাড়িয়ে থাকা রমণীর প্রসন্নতা এবং তার পাশের জনের গলদশ্রু। আমিতো শিশুমুখে তাকিয়ে রয়েছি তাদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখে। আমি কাকে অনুকরণ করবো সেই ভাবনা থেকেই দিলাম উপরের দিকে হাত তুলে।

কপটতার প্লাবনে হারিয়ে ফেলেছি নিজেকে,
হারিয়েছি অনুভূতির সাথে আলিঙ্গনের স্বাদটুকু।
নেমে আসো অধ্রুব হয়েই অবিলম্বে কিংবা-
বাতাসে প্রেরণ কর তোমার সর্বশেষ ওহী,
জানিয়ে দাও সুখ দুঃখ প্রসবিত হয় কার গর্ভে?
কোথায় তাদের সুবিন্যস্ত করবো, কিভাবে?

জবাব পাবো না জেনেই বলেছিলাম দু চার বাক্য। থাকবো না চলে যাবো, থাকলেই কি লাভ কিংবা চলে গেলেইবা কি ক্ষতি? নিজেতো বুঝি না তাই পর্বাস্ফোটের ধ্বনিতেও জবাব মিলে না। স্বয়ংক্রিয় ভাবেই দু'পা চলতে শুরু করে বাতাসের ধূর্ত ইশারায়।

ধুলো পরা পালঙ্কে পিঠ লাগিয়ে রেখেছি সেই কখন থেকে, ঝুপড়ির ফুটো দিয়ে যখন জোত্স্না প্রবেশ করলো তখনই বুঝতে পারলাম না অনুভূতিগুলো  এখনো হারিয়ে যায়নি। তারা হারায় না, ছেড়ে চলে যায়। তাই এখনো দেখা যায় তাদেরকে পুরা-তাত্ত্বিক পোশাকে, অতন্দ্রহীন হয়ে ঘুরে বেড়াতে ঠাকুর বাড়ির আশেপাশে। বক ধার্মিক হয়ে তার অঙ্কোপরিতে বসে বিনে পয়সায় খপোতে চড়তে চায় নিস্তরণের আশায়। মাঝে মাঝে আবার দেখি তক্কেতক্কে থাকে শীতল চক্ষু তাতিয়ে আঁধারের কালী মার দিকে, কখন জেগে উঠবে অন্তর্বাহী হবে ঘুমনদী হয়ে। আবার দেখা যায় অমৃত প্রেমজল পান করে আশ্রিত হতে কারো 'অ' লেখার ছিন্নাংশে, সম্ভাবনীয়তা কাটিয়ে নির্ভাবনায় ভাবনার সাথে খাতির জমায় দু চুম্বকীয় চুম্বনে।
 
আর তাই আমিও আর তাদের ফিরিয়ে আনতে চাই না, চাই না ফিরে আসুক অক্রিয় অগাকান্তের এই শ্যাওলা আবৃত হৃদয় কোটরে।

0 মন্তব্য:

Facebook Comments by প্রহেলিকা

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More

 
Design by প্রহেলিকা