বৃহস্পতিবার, ২৯ মে, ২০১৪

ঋণ

ভর দুপুরে জলে ভাসে
তাজা মাথার খুলি।
সাংবাদিকের সাথে গিয়ে,
সবাই ছবি তুলি।

পরিচয় তার জানে না কেউ,
কোন গ্রামেই বা তার বাস।
আশেপাশের সবাই বলে,
ইশ একি সর্বনাশ!

হঠাৎ করে দৌড়ে এসে,
মা খুঁজে তার ছেলে।
ছেলে তার বলে না কথা,
চোখে আগুন জ্বলে।

অন্ধ মায়ের কান্না ভাসে,
সবুজ শ্যামল দেশে।
বোন কাঁদে তার ভাই-এর জন্য
বিচার পায় না শেষে।

দেশটারে কে খেলো গিলে,
আর খাবে কত দিন?
সময় বাপু আসছে তেড়ে,
শোধ করতে হবে ঋণ।

বুধবার, ২৮ মে, ২০১৪

শ্ববৃত্তি

ছুঁড়ে ফেলে অনুপ কাব্যের কুৎসিত পাণ্ডুলিপি,
উগড়ে দিয়ে সুবজ শেকড়ের নির্যাস-
অপাদমস্তকে মেখেছি আধুনিকতা।
কতই না করেছিলি উপহাস তোরা-
কাকের কা কা-এর কর্কশ সুরে-
দেখে শিশির দলিত ভোরের তেজস্বী ছটা।
আজও জানি চিপটান কাটবি-
হা হা করে, অন্তপুরের কুপিত বায়ুতে-
কপট শয্যাতেই বিছিয়ে দিবি জায়নামাজ।

আর আমি!
পৌঁছেছি অস্বাক্ষরিত সংবিধানের শেষ পৃষ্ঠায়,
অপ্রহত কাননে বিমূঢ়তার পৃষ্ঠে করতে ভ্রমর চাষ।

মঙ্গলবার, ২৭ মে, ২০১৪

প্রহেলিকার আত্মকথন-৪

রোষিত বাতাসের বিক্ষুব্ধতায় সচকিত মোড়ে ঝুলন্ত উর্বশী। কাঁচ জানালার স্বচ্ছতায় দেখি অনুক্ত শব্দের মিছিল তার চোখে। প্রত্যুষ পূর্বেই জেগে উঠা ঘোর কাটে মায়াবিষ্ট সপ্রতিভ দৃষ্টিতে। দেয়ালের স্থির চিত্রটি হঠাৎ স্বশব্দে নড়ে উঠে অশ্লীল শুন্যালয়ে। ক্রমশ বাড়তে থাকে দৃষ্টিক্ষুধার তপ্ততা। স্থিত হাসির মরিচিকায় দ্রবীভূত লবন স্তর, নিমিষেই স্পষ্টিত সহস্র যোজন দূরে দাঁড়িয়ে থাকা জ্যোৎস্নাহীন রাতে যুগল প্রণয়ের প্রতিবিম্ব। আমিও তাকিয়ে দেখি কত ব্যাকুলতায় আলো বিলিয়েছে জোনাকী! তর্জনীর ইশারায় দোদুল্যমান মেঘগুলো ঝরেছিলো বৃষ্টি হয়ে রৌদ্রদগ্ধ অবয়বে, সৃষ্টি হয়েছিলো শীৎকারের মহানাদ। অগ্নিকেতুর অস্বচ্ছতায় মত্ত হয়ে জড়িয়েছিলাম সেদিন; আর্দ্র ওষ্ঠের আড়ালে নিলীন সূর্যশিশিরের ইন্দ্রজালে। আজ অবোধেই চলি ছাঁয়াশুন্য পথ; পিছনে ফেলে রেখে প্রহেলিকার জলাশয়।

এভাবে আর তাকিও না হে উর্বশী, যদি দৃষ্টিতেই সৃষ্টি হয় নিরুদ্ধ জলপাহাড়, কক্ষভ্রষ্ট হয় নক্ষত্ররা। এক নিমিষেই যা অবতীর্ণ করে সংসর্পিত কল্পরাজ্যে পরক্ষণেই নিমজ্জিত করে অভাবিত এঁদো কূপে; এমন দৃষ্টির পালক আর না মেলেলই কি নয়?

রবিবার, ২৫ মে, ২০১৪

অনন্ত -মিথিলা (আবুল হোসেন খোকন)

অনন্ত, মেহিদি পাতা দেখেছ নিশ্চয়?
উপরে সবুজ, ভেতরে রক্তাক্ত ক্ষত-বিক্ষত-
নিজেকে আজকাল বড় বেশি মেহেদি পাতার মতো,
মনে হয় কেন?

উপরে আমি অথচ ভিতরে কষ্টের যন্ত্রনার-
এমন সব বড় বড় গর্ত যে-
তার সামনে দাড়াতে নিজেরী ভয় হয়, অনন্ত।
তুমি কেমন আছো?
বিরক্ত হচ্ছ না তো?

ভালোবাসা যে মানুষকে অসহায়ও করে তুলতে পারে-
সেদিন তোমায় দেখার আগ পর্যন্ত-
আমার জানা ছিলো না।
তোমার উদ্দাম ভালোবাসার দূতি-
জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে ফেলেছে আমার ভিতর-
আমার বাহির-
আমার হাতে গড়া আমার পৃথিবী।

অনন্ত, যেই মিথিলা শুখী হবে বলে-
ভালোবাসার পূর্ণ চঁন্দ গিলে খেয়ে-
ভেজা মেঘের মতো উড়তে উড়তে চলে গেল,
আজ অন্য শূন্য, অনন্তকে আরো শূন্য করে দিয়ে-
তার মুখে এসব কথা মানায় না,
আমি জানি-
কিন্তু আমি আর এভাবে এমন করে পারছি না
আমার চারদিকের দেয়াল জুড়ে থই থই করে-
আমার স্বপ্ন খুনের রক্ত।

উদাস দুপুরে বাতাসে শিষ দেয়
তোমার সেই ভালোবাসা
পায়ে পায়ে ঘুরে ফেরে ছায়ার মতোন-
তোমার স্বৃতি।
আমি আগলাতেও পারি না,
আমি ফেলতেও পারি না।
শুখী হতে চেয়ে এখন দাড়িয়ে আমি-
একলা আমি-
কষ্টের তুষার পাহারে।

অনন্ত তোমার সামনে দাড়ানোর কোন –
যোগ্যতাই আজ আমার অবশিষ্ট নেই।
তবুও,
তবুও তুমি একদিন বলেছিলে-
ভেজা মেঘের মতো-
অবুজ আকাশে উড়তে উড়তে-
জীবনের সুতোয় যদি টান পরে কখনো?
চলে এসো, চলে এসো-
বুক পেতে দেব-আকাশ বানাবো
আর হাসনা হেনা ফুটাবো।

সুতোয় আমার টান পরেছে অনন্ত,
তাই আজ আমার সবকিছু,
আমার এক রোখা জেদ,
তুমি হীনা শুখী অনেক স্বপ্ন!
সব, সবকিছু জলাঞ্জলী দিয়ে-
তোমার সামনে আমি নত জানু-
আমায় তোমাকে আর একবার ভিক্ষে দাও।
কথা দিচ্ছি- তোমার অমর্যাদা হবে না কোনদিন।

অনন্ত, আমি জানি-
এখন তুমি একলা পাষান কষ্ট নিয়ে ঘুরে বেড়াও,
প্রচন্ড এক অভিমানে-
ক্ষনে ক্ষনে গর্জে উঠে অগ্নিগিরি।
কেউ জানে না, আমি জানি-
কেন তোমার মনের মাঝে মন থাকে না,
ঘরের মাঝে ঘর থাকে না,
উঠোন জোরার উপর কলস-
তুলসি তলের ঝড়া পাতা,
কুয়ো তলার শূন্য বালতি-
বাসন-কোসন, পূর্নিমা-অমাবর্ষা,
একলা ঘরে এই অনন্ত-

একা শুয়ে থাকা।
কেউ জানে না, আমি জানি-
কেন তুমি এমন করে কষ্ট পেলে-
সব হরিয়ে বুকের তলের চিতানলে-
কেন তুমি নষ্ট হলে?
কার বিহনে চুপি চুপি, ধীরে ধীরে-
কেউ জানে না, আমি জানি-
আমিই জানি।

আগামি শনিবার ভোরের ট্রেনে তোমার কাছে আসছি।
অনন্ত, আমার আর কিছু না দাও- অন্তত শাস্তিটুকু দিও।
ভালো থেকো!
তোমারি হারিয়ে যাওয়া মিথিলা।


সংগ্রহ: আমিন পরবাসী

তোমার চোখ এতো লাল কেন? – নির্মলেন্দু গুণ

আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে , আমি চাই
কেউ একজন আমার জন্য অপেক্ষা করুক,
শুধু ঘরের ভেতর থেকে দরোজা খুলে দেবার জন্য ।
বাইরে থেকে দরোজা খুলতে খুলতে আমি এখন ক্লান্ত ।

আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ আমাকে খেতে দিক । আমি হাতপাখা নিয়ে
কাউকে আমার পাশে বসে থাকতে বলছি না,
আমি জানি, এই ইলেকট্রিকের যুগ
নারীকে মুক্তি দিয়েছে স্বামী -সেবার দায় থেকে ।
আমি চাই কেউ একজন জিজ্ঞেস করুক :
আমার জল লাগবে কি না, নুন লাগবে কি না,
পাটশাক ভাজার সঙ্গে আরও একটা
তেলে ভাজা শুকনো মরিচ লাগবে কি না ।
এঁটো বাসন, গেঞ্জি-রুমাল আমি নিজেই ধুতে পারি ।

আমি বলছি না ভলোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ একজন ভিতর থেকে আমার ঘরের দরোজা
খুলে দিক । কেউ আমাকে কিছু খেতে বলুক ।
কাম-বাসনার সঙ্গী না হোক, কেউ অন্তত আমাকে
জিজ্ঞেস করুক : ‘তোমার চোখ এতো লাল কেন ?’’


সংগ্রহ: আমিন পরবাসী

শুক্রবার, ২৩ মে, ২০১৪

জীবনান্বেষণ

কখনো কখনো কেউ ব্যাকুল হয়ে উঠে অনামক জীবনের খুঁজে,
অথবা নিরাকার আলিঙ্গনে নিতে স্বার্থকতার স্বাদ চোখ বুঁজে।
দেখি সুনির্দিষ্টতার শেকল পরে পঞ্চালিকার সকাতর নিস্তরঙ্গতা,
উজ্জ্বল বার্নিশে ঢেকে ব্যর্থতা, অনামুখে নিজের সাথেই শঠতা।
বর্ণচোরার রুপবাহুল্যে বিভোর হয়ে উঠে নিজেকে বিলাতে,
স্বপ্নকারের ধূর্ত নয়নে চায় যে অন্তর্বাহী সুখ চৈত্রের খরাতে।
অনুগ্রহের জলস্নানে চায় পুণ্যতার স্বীকৃতি, করে না সমর্পণ-
অপ্রতিম চাহনীতে, বইতে চায় না কোনো উপেক্ষার ভারার্পণ।
অশিথিল উৎসুক নয়নে প্রতি মুহূর্তে পারমানবিক বিস্ফোরণ,
তবুও খুঁজে জীবন, অরণ্য রোধন, অতঃপর আঁধারে আস্তরণ।

মা'য়ের শাসনবৃত্তে যখন বন্দী ছিলো কৈশোরের তুখোড়তা,
বাবার সুতীক্ষ্ণ দৃষ্টি যখন বয়ে এনেছিলো সাময়িক জড়তা,
মনে পরে সেদিন বলেছিলাম, জীবন তুমি কি ভবঘুরে হয়ে-
কাটানো পথিকের প্রতিবিম্ব? মলিন মুখে ঝরো উচ্ছ্বাস হয়ে?
নাকি কোনো পাঠকের শেষ অধ্যায়? অপূর্ণতার দীর্ঘশ্বাস?
জবাব দেয়নি, তাই করিনা অধ্রুব জীবনে সংস্কারে বিশ্বাস।
নিরবতার বিদ্রুপে ঘর্মাক্ত শরীর, উর্ধ্বগতিতে সময়ের রথ,
এখন শুধুই চাই সুপর্ণ বৃক্ষের ছাঁয়ায় হেঁটে যাবো সুদীর্ঘ পথ।
যদি কখনো সম্মুখে এসে দাঁড়ায় লোভাতুর দৃষ্টিতে ছদ্মবেশে,
তখনিই অঙ্কিত করবো বিজয়ের উপসংহার শূন্য ক্যানভাসে।

বুধবার, ২১ মে, ২০১৪

বাংলার গ্রাম

বাংলার গ্রাম 


কচুরিপানা 
 

সবুজ বাংলা


বর্ষাকাল


সবুজ বাংলা 


কচুরিপানা 


কচুরিপানা  



সবুজ বাংলা  



কচুরিপানা   


কচুরিপানা   


কচুরিপানা   



সবুজ বাংলা 



সবুজ বাংলা  




সবুজ বাংলা  



কচুরিপানা   



সবুজ বাংলা  



কচুরিপানা   


কচুরিপানা   


সভ্য সমাজ

আচ্ছাদিত হইনি অভিপ্রায়ের চাদরে,
কখনোই ভাসিনি দিগবিজয়ের সাগরে।
চাইনি আকাশচুম্বী দালানের দাম্ভিকতা,
কোমল বিছানায় হোক দাহিত সরলতা।
অস্বচ্ছ নয়নে শুধু মেতে ছিলাম ব্রতে,
ক্ষণস্থায়ী এই সমাজের বাসিন্দা হতে।
কিন্তু দরিদ্রতার দুর্গন্ধে নাক চেপে ধরে,
সুতীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে বললে "যাও দুরে সরে"।
ফিরেছি অসংগত ইচ্ছার কপাট থেকে,
তাই আক্ষেপে জ্বলিনি সভ্য সমাজ দেখে।

মঙ্গলবার, ২০ মে, ২০১৪

পথের মায়া

চাইলেই ফিরে যেতে পারতাম শিথিল দেহে,
নিরেট কুয়াশার বুক ভেদ করে নিকৃষ্ট ব্যর্থতায়,
হয়তোবা ফিরতে পারতাম প্রসিদ্ধ দক্ষতায়-
অস্বীকৃত পথের শেষ প্রান্ত থেকে অনায়াসে।
সুনিপুনে ভষ্মিভূত করে মর্ত্যের চোরাবালিকে-
ফিরে যেতে পারতাম নলখাগড়ার বনে।

কেন ফিরে যাব? যে পথে হেঁটে এসেছি
দিন রাত্রির বৈষম্যতা ভুলে, অনাহারে-
শুকিয়ে খাদ্যনালী অপেক্ষমান ক্যান্সারের,

দরিদ্রতার তান্ডবে এলোমেলো বাবুই নীড়।
তেজো মূর্তিকে ফেলে ধূলোময় পথ ধরে -
হেঁটে এসে আজ কেনইবা ফিরে যাবো?

আর ফিরবোনা; অন্ধত্ব লাভ করুক স্হিত দৃষ্টি।
সবুজ মেঘগুলো নেমে আসুক বৃষ্টি হয়ে,
কাদামাটিতে রুপান্তরিত হোক শেষ অবলম্বনটুকু।
অসাড় দেহে চাইনা প্রলুব্ধিত সতেজ নয়ন,
আজ বরং তারা আবৃত হোক গাঢ় অন্ধকারেই।

হোক আধিখ্যেতা! অজ্ঞাত পাপের উপ শাখায়-
ঝুলিয়ে সভ্যতার পোষাক, জন্মাক আজ নগ্নতা। 

শনিবার, ১৭ মে, ২০১৪

প্রহেলিকার আত্মকথন-৩

বিনিপাতে বিপর্যস্ত অদৃশ্য মানবী, দুরত্ব রেখাকে প্রলম্বিত করে নিরুদ্দিষ্ট হয়েছে নিশ্চুপে। পাচ্ছিনা তার কোনো পদচিহ্ন এই অপ্রশস্ত ভোরে; হারিয়েছে কোন পথে অজানা সুরে? বলে যায়নি কিছুই আমাকে; জাগবে কি'না ক্লান্ত হলে এই দু'চোখে কিংবা কৃত্তিম অন্ধকারে রাতের অবসানে। তবে জানি আমি, ধর্ম তার দিনান্তে অমর হবার। ক্লান্ত দেহে বীজ বুনে সে সতেজতার। নিয়ে যায় সুবর্ণময় দ্যোতনায় কল্পরাজ্যের অভিসারে। তার হন্তব্য দৃষ্টিতে শীতল হয় ব্যর্থ দিনের যন্ত্রণার লাভা। তার অস্পর্শতায় জ্বলছি অহরাত্রিতে নির্দয় সন্তাপে। ঘর্মাক্ত শরীরেই আজ অপেক্ষারত সেই মানবীর, যে কিনা রাতের আঁধারে এসে বিমোহিত করতো অযাচিত আলিঙ্গনে।
 
প্রতি নিমিষেই বাড়তে থাকে আলোকরশ্মির ঘনত্ব। দেহকে করে স্বেদসমুদ্রে সন্তরণ; স্বপ্নাবিষ্ট এই নয়নযুগল চেয়ে থাকে তার ফেরার পথে। 

শুক্রবার, ১৬ মে, ২০১৪

বাংলা ছন্দ

শুভেচ্ছাছন্দ : কাব্যের রসঘন ও শ্রুতিমধুর বাক্যে সুশৃঙ্খল ধ্বনিবিন্যাসের ফলে যে সৌন্দর্য সৃষ্টি হয় তাকে ছন্দ বলে। (বাঙলা ছন্দ : জীবেন্দ্র সিংহরায়)

অর্থাৎ, কবি তার কবিতার ধ্বনিগুলোকে যে সুশৃঙ্খল বিন্যাসে বিন্যস্ত করে তাতে এক বিশেষ ধ্বনিসুষমা দান করেন, যার ফলে কবিতাটি পড়ার সময় পাঠক এক ধরনের ধ্বনিমাধুর্য উপভোগ করেন, ধ্বনির সেই সুশৃঙ্খল বিন্যাসকেই ছন্দ বলা হয়।

বিভিন্ন প্রকার ছন্দ সম্পর্কে জানার পূর্বে ছন্দের কিছু উপকরণ সম্পর্কে জেনে নেয়া জরুরি। আর ছন্দ সম্পর্কে পড়ার আগে আরেকটা জিনিস মাথায় রাখা দরকার- ছন্দ সর্বদা উচ্চারণের সাথে সম্পর্কিত, বানানের সঙ্গে নয়।

অক্ষর : (বাগযন্ত্রের) স্বল্পতম প্রয়াসে বা এক ঝোঁকে শব্দের যে অংশটুকু উচ্চারিত হয়, তাকে অক্ষর বা দল বলে। এই অক্ষর অনেকটাই ইংরেজি Syllable-র মত। যেমন-
শর্বরী- শর, বো, রী- ৩ অক্ষর
চিরজীবী- চি, রো, জী, বী- ৪ অক্ষর
কুঞ্জ- কুন, জো- ২ অক্ষর

যতি বা ছন্দ-যতি : কোন বাক্য পড়ার সময় শ্বাসগ্রহণের সুবিধার জন্য নির্দিষ্ট সময়ে অন্তর অন্তর যে উচ্চারণ বিরতি নেয়া হয়, তাকে ছন্দ-যতি বা শ্বাস-যতি বলে।
যতি মূলত ২ প্রকার- হ্রস্ব যতি ও দীর্ঘ যতি। অল্পক্ষণ বিরতির জন্য সাধারণত বাক্য বা পদের মাঝখানে হ্রস্ব যতি দেওয়া হয়। আর বেশিক্ষণ বিরতির জন্য, সাধারণত বাক্য বা পদের শেষে দীর্ঘ যতি ব্যবহৃত হয়।

পর্ব : বাক্য বা পদের এক হ্রস্ব যতি হতে আরেক হ্রস্ব যতি পর্যন্ত অংশকে পর্ব বলা হয়। যেমন-
একলা ছিলেম ∣ কুয়োর ধারে ∣ নিমের ছায়া ∣ তলে ∣∣
কলস নিয়ে ∣ সবাই তখন ∣ পাড়ায় গেছে ∣ চলে ∣∣ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
( ∣ - হ্রস্ব যতি ও ∣∣ - দীর্ঘ যতি)
এখানে একলা ছিলেম, কুয়োর ধারে, নিমের ছায়া, তলে- প্রতিটিই একেকটি পর্ব; মানে প্রতিটি চরণে ৪টি করে পর্ব।

মাত্রা : একটি অক্ষর উচ্চারণে যে সময় প্রয়োজন হয়, তাকে মাত্রা বলে। বাংলায় এই মাত্রাসংখ্যার নির্দিষ্ট নয়, একেক ছন্দে একেক অক্ষরের মাত্রাসংখ্যা একেক রকম হয়। মূলত, এই মাত্রার ভিন্নতাই বাংলা ছন্দগুলোর ভিত্তি। বিভিন্ন ছন্দে মাত্রাগণনার রীতি বিভিন্ন ছন্দের আলোচনায় দেয়া আছে।

শ্বাসাঘাত : প্রায়ই বাংলা কবিতা পাঠ করার সময় পর্বের প্রথম অক্ষরের উপর একটা আলাদা জোর দিয়ে পড়তে হয়। এই অতিরিক্ত জোর দিয়ে পাঠ করা বা আবৃত্তি করাকেই বলা হয় শ্বাসাঘাত বা প্রস্বর। যেমন-
আমরা আছি ∣ হাজার বছর ∣ ঘুমের ঘোরের ∣ গাঁয়ে ∣∣
আমরা ভেসে ∣ বেড়াই স্রোতের ∣ শেওলা ঘেরা ∣ নায়ে ∣∣ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)

এখানে প্রতিটি পর্বের প্রথম অক্ষরই একটু ঝোঁক দিয়ে, জোর দিয়ে পড়তে হয়। এই অতিরিক্ত ঝোঁক বা জোরকেই শ্বাসাঘাত বলে।

পদ ও চরণ : দীর্ঘ যতি বা পূর্ণ যতি ছাড়াও এই দুই যতির মধ্যবর্তী বিরতির জন্য মধ্যযতি ব্যবহৃত হয় । দুই দীর্ঘ যতির মধ্যবর্তী অংশকে চরণ বলে, আর মধ্য যতি দ্বারা চরণকে বিভক্ত করা হলে সেই অংশগুলোকে বলা হয় পদ। যেমন-
তরুতলে আছি ∣ একেলা পড়িয়া ⊥ দলিত পত্র ∣ শয়নে ∣∣
তোমাতে আমাতে ∣ রত ছিনু যবে ⊥ কাননে কুসুম ∣ চয়নে∣∣ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
(এখানে ⊥ দ্বারা মধ্যযতি চিহ্নিত করা হয়েছে।)

পূর্ণযতি দ্বারা আলাদা করা দুইটি অংশই চরণ; আর চরণের মধ্যযতি দিয়ে পৃথক করা অংশগুলো পদ। এরকম-

যা আছে সব ∣ একেবারে ⊥
     করবে অধি ∣ কার ∣∣ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)

স্তবক : অনেকগুলো চরণ নিয়ে একটি স্তবক গঠিত হয়। সাধারণত, একটি স্তবকে একটি ভাব প্রকাশিত হয়।

মিল : একাধিক পদ, পর্ব বা চরণের শেষে একই রকম ধ্বনি বা ধ্বনিগুচ্ছের ব্যবহারকে মিল বলে। অলংকারের ভাষায় একে বলে অনুপ্রাস। সাধারণত, মিল পদের শেষে থাকলেও শুরুতে বা মাঝেও মিল থাকতে পারে। পদের শেষের মিলকে অন্ত্যমিল বলে। যেমন-
মুখে দেয় জল ∣ শুধায় কুশল ∣ শিরে নাই মোর ∣ হাত ∣∣
দাঁড়ায়ে নিঝুম ∣ চোখে নাই ঘুম ∣ মুখে নাই তার ∣ ভাত ∣∣ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)

এখানে, প্রথম চরণের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বের শেষের পদদুটিতে অন্ত্যমিল (অল) আছে; দ্বিতীয় চরণের প্রথম দুই পদের শেষেও অন্ত্যমিল আছে (উম)। আবার দ্বিতীয় চরণের প্রথম দুই পদের শেষের ধ্বনি (ম) তৃতীয় পদের শুরুতে ব্যবহৃত হয়ে আরেকটি মিল সৃষ্টি করেছে। আর দুই চরণের শেষের পদেও অন্ত্যমিল আছে (আত)।

এবার, সুকান্ত ভট্টাচর্যের আঠারো বছর বয়স- কবিতার প্রথম দুটি স্তবকের ছন্দের এসব উপকরণ নিয়ে আলোচনা করলে বুঝতে সুবিধা হতে পারে।

আঠারো বছর বয়স
সুকান্ত ভট্টাচার্য

আঠারো বছর ∣ বয়স কী দুঃ ∣ সহ ∣∣
স্পর্ধায় নেয় ∣ মাথা তোলবার ∣ ঝুঁকি, ∣∣
আঠারো বছর ∣ বয়সেই অহ ∣ রহ ∣∣
বিরাট দুঃসা ∣ হসেরা দেয় যে ∣ উঁকি। ∣∣∣

আঠারো বছর ∣ বয়সের নেই ∣ ভয় ∣∣
পদাঘাতে চায় ∣ ভাঙতে পাথর ∣ বাধা, ∣∣
এ বয়সে কেউ ∣ মাথা নোয়াবার ∣ নয়- ∣∣
আঠারো বছর ∣ বয়স জানে না ∣ কাঁদা। ∣∣

উপরে কবিতাটির ছন্দ যতির স্থান নির্দেশ করা হয়েছে। অর্থাৎ, এর পর্ব, পদ ও চরণ একরকম নির্দেশিত হয়েছে। প্রতিটি চরণে তিনটি পর্ব রয়েছে; প্রথম দুটি পর্ব ৬ মাত্রার, শেষ পর্বে ২ মাত্রার (মাত্রা গণনা নিচে ছন্দ অনুযায়ী আলোচনা করা আছে)। অর্থাৎ শেষ পর্বটিতে মাত্রা কম আছে। কবিতায় এরকম কম মাত্রার পর্বকে অপূর্ণ পর্ব বলে।

কবিতাটির প্রতি চারটি চরণে কোন বিশেষ ভাব নির্দেশিত হয়েছে। এগুলোকে একেকটি স্তবক বলে। যেমন, প্রথম স্তবকটিকে কবিতাটির ভূমিকা বলা যেতে পারে, এখানে কবিতাটির মূলভাবই অনেকটা অনূদিত হয়েছে। আবার দ্বিতীয় স্তবকে আঠারো বছর বয়সের, অর্থাৎ তারুণ্যের নির্ভীকতা/ভয়হীনতা বর্ণিত হয়েছে। এভাবে কবিতার একেকটি স্তবকে একেকটি ভাব বর্ণিত হয়।

আবার কবিতাটির চরণের অন্ত্যমিলের দিকে খেয়াল করলে দেখা যাবে, প্রতি স্তবকের প্রথম ও তৃতীয় চরণের শেষে এবং দ্বিতীয় ও চতুর্থ চরণের শেষে অন্ত্যমিল আছে। এছাড়া চরণগুলোর ভেতরেও খুঁজলে মিল পাওয়া যাবে।

বাংলা ছন্দের প্রকারভেদ
বাংলা কবিতার ছন্দ মূলত ৩টি- স্বরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত ও অক্ষরবৃত্ত । তবে বিংশ শতক থেকে কবিরা গদ্যছন্দেও কবিতা লিখতে শুরু করেছেন। এই ছন্দে সেই সুশৃঙ্খল বিন্যাস না থাকলেও ধ্বনিমাধুর্যটুকু অটুট রয়ে গেছে, যে মাধুর্যের কারণে ধ্বনিবিন্যাস ছন্দে রূপায়িত হয়।

নিচে সংক্ষেপে ছন্দ ৩টির বর্ণনা দেয়া হল।

স্বরবৃত্ত ছন্দ : ছড়ায় বহুল ব্যবহৃত হয় বলে, এই ছন্দকে ছড়ার ছন্দও বলা হয়।
• মূল পর্ব সবসময় ৪ মাত্রার হয়
• প্রতি পর্বের প্রথম অক্ষরে শ্বাসাঘাত পড়ে
• সব অক্ষর ১ মাত্রা গুনতে হয়
• দ্রুত লয় থাকে, মানে কবিতা আবৃত্তি করার সময় দ্রুত পড়তে হয়
উদাহরণ-
বাঁশ বাগানের ∣ মাথার উপর ∣ চাঁদ উঠেছে ∣ ওই ∣∣ (৪+৪+৪+১)
মাগো আমার ∣ শোলোক বলা ∣ কাজলা দিদি ∣ কই ∣∣ (৪+৪+৪+১)
                                     (যতীন্দ্রমোহন বাগচী)
এখানে bold হিসেবে লিখিত অক্ষরগুলো উচ্চারণের সময় শ্বাসাঘাত পড়ে, বা ঝোঁক দিয়ে পড়তে হয়। আর দাগাঙ্কিত অক্ষরগুলোতে মিল বা অনুপ্রাস পরিলক্ষিত হয়।

এরকম-
রায় বেশে নাচ ∣ নাচের ঝোঁকে ∣ মাথায় মারলে ∣ গাঁট্টা ∣∣ (৪+৪+৪+২)
শ্বশুর কাঁদে ∣ মেয়ের শোকে ∣ বর হেসে কয় ∣ ঠাট্টা ∣∣ (৪+৪+৪+২)
                                     (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)

মাত্রাবৃত্ত ছন্দ :
• মূল পর্ব ৪,৫,৬ বা ৭ মাত্রার হয়
• অক্ষরের শেষে স্বরধ্বনি থাকলে ১ মাত্রা গুনতে হয়; আর অক্ষরের শেষে ব্যঞ্জনধ্বনি থাকলে (য় থাকলেও) ২ মাত্রা গুনতে হয়; য় থাকলে, যেমন- হয়, কয়; য়-কে বলা যায় semi-vowel, পুরো স্বরধ্বনি নয়, তাই এটি অক্ষরের শেষে থাকলে মাত্রা ২ হয়
• কবিতা আবৃত্তির গতি স্বরবৃত্ত ছন্দের চেয়ে ধীর, কিন্তু অক্ষরবৃত্তের চেয়ে দ্রুত
উদাহরণ-

এইখানে তোর ∣ দাদির কবর ∣ ডালিম-গাছের ∣ তলে ∣∣ (৬+৬+৬+২)
তিরিশ বছর ∣ ভিজায়ে রেখেছি ∣ দুই নয়নের ∣ জলে ∣∣ (৬+৬+৬+২)
                                     (কবর; জসীমউদদীন)

কবিতাটির মূল পর্ব ৬ মাত্রার। প্রতি চরণে তিনটি ৬ মাত্রার পূর্ণ পর্ব এবং একটি ২ মাত্রার অপূর্ণ পর্ব আছে।
এখন মাত্রা গণনা করলে দেখা যাচ্ছে, প্রথম চরণের-
প্রথম পর্ব- এইখানে তোর; এ+ই+খা+নে = ৪ মাত্রা (প্রতিটি অক্ষরের শেষে স্বরধ্বনি থাকায় প্রতিটি ১ মাত্রা); তোর = ২ মাত্রা (অক্ষরের শেষে ব্যঞ্জনধ্বনি থাকায় ২ মাত্রা)
দ্বিতীয় পর্ব- দাদির কবর; দা+দির = ১+২ = ৩ মাত্রা; ক+বর = ১+২ = ৩ মাত্রা
তৃতীয় পর্ব- ডালিম-গাছের; ডা+লিম = ১+২ = ৩ মাত্রা; গা+ছের = ১+২ = ৩ মাত্রা
চতুর্থ পর্ব- তলে; ত+লে = ১+১ = ২ মাত্রা


অক্ষরবৃত্ত ছন্দ :

• মূল পর্ব ৮ বা ১০ মাত্রার হয়
• অক্ষরের শেষে স্বরধ্বনি থাকলে ১ মাত্রা গুনতে হয়
• অক্ষরের শেষে ব্যঞ্জনধ্বনি আছে, এমন অক্ষর শব্দের শেষে থাকলে ২ মাত্রা হয়; শব্দের শুরুতে বা মাঝে থাকলে ১ মাত্রা হয়
• কোন শব্দ এক অক্ষরের হলে, এবং সেই অক্ষরের শেষে ব্যঞ্জনধ্বনি থাকলে, সেই অক্ষরটির মাত্রা ২ হয়
• কোন সমাসবদ্ধ পদের শুরুতে যদি এমন অক্ষর থাকে, যার শেষে ব্যঞ্জনধ্বনি আছে, তবে সেই অক্ষরের মাত্রা ১ বা ২ হতে পারে
• কবিতা আবৃত্তির গতি ধীর হয়
উদাহরণ-

হে কবি, নীরব কেন ∣ ফাগুন যে এসেছে ধরায় ∣∣ (৮+১০)
বসন্তে বরিয়া তুমি ∣ লবে না কি তব বন্দনায় ∣∣ (৮+১০)
           কহিল সে স্নিগ্ধ আঁখি তুলি- ∣∣ (১০)
           দক্ষিণ দুয়ার গেছে খুলি? ∣∣ (১০)
                                     (তাহারেই পড়ে মনে; সুফিয়া কামাল)
কবিতাটির মূল পর্ব ৮ ও ১০ মাত্রার। স্তবক দুইটি পর্বের হলেও এক পর্বেরও স্তবক আছে।
এখন, মাত্রা গণনা করলে দেখা যায়, প্রথম চরণের,
প্রথম পর্ব- হে কবি, নীরব কেন; হে কবি- হে+ক+বি = ৩ মাত্রা (তিনটি অক্ষরের প্রতিটির শেষে স্বরধ্বনি থাকায় প্রতিটি ১ মাত্রা); নীরব- নী+রব = ১+২ = ৩ মাত্রা (শব্দের শেষের অক্ষরের শেষে ব্যঞ্জনধ্বনি থাকায় সেটি ২ মাত্রা); কেন- কে+ন = ১+১ = ২ মাত্রা; মোট ৮ মাত্রা
আবার দ্বিতীয় চরণের,
দ্বিতীয় পর্ব- লবে না কি তব বন্দনায়; লবে- ল+বে = ২ মাত্রা; না কি তব = না+কি+ত+ব = ৪ মাত্রা; বন্দনায়- বন+দ+নায় = ১+১+২ = ৪ মাত্রা (বন- অক্ষরের শেষে ব্যঞ্জনধ্বনি থাকলেও অক্ষরটি শব্দের শেষে না থাকায় এর মাত্রা ১ হবে; আবার নায়- অক্ষরের শেষে ব্যঞ্জনধ্বনি- য় থাকায়, এবং অক্ষরটি শব্দের শেষে থাকায় এর মাত্রা হবে ২); মোট ১০ মাত্রা

এরকম-
আসি তবে ∣ ধন্যবাদ ∣∣ (৪+৪)
না না সে কি, ∣ প্রচুর খেয়েছি ∣∣ (৪+৬)
আপ্যায়ন সমাদর ∣ যতটা পেয়েছি ∣∣ (৮+৬)
ধারণাই ছিলো না আমার- ∣∣ (১০)
ধন্যবাদ। ∣∣ (৪)
                                     (ধন্যবাদ; আহসান হাবীব)

অক্ষরবৃত্ত ছন্দের রূপভেদ বা প্রকারভেদ : অক্ষরবৃত্ত ছন্দের আবার অনেকগুলো রূপভেদ বা প্রকার আছে- পয়ার, মহাপয়ার, ত্রিপদী, চৌপদী, দিগক্ষরা, একাবলী, সনেট ও অমিত্রাক্ষর ছন্দ। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সনেট ও অমিত্রাক্ষর ছন্দ। নিচে এগুলোর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হল-

সনেট :
• বাংলা ভাষায় প্রথম সনেট রচনা করেন- মাইকেল মধুসূদন দত্ত
• বাংলায় উল্লেখযোগ্য সনেট রচয়িতা- মাইকেল মধুসূদন দত্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জীবনানন্দ দাশ, প্রমথ চৌধুরী, মোহিতলাল মজুমদার, অক্ষয়কুমার বড়াল, ফররুখ আহমদ,কামিনী রায়, প্রমুখ
• ১৪ বা ১৮ মাত্রার চরণ হয়
• দুই স্তবকে ১৪টি চরণ থাকে
• সাধারণত দুই স্তবকে যথাক্রমে ৮টি ও ৬টি চরণ থাকে (চরণ বিন্যাসে ব্যতিক্রম থাকতে পারে)
• প্রথম আটটি চরণের স্তবককে অষ্টক ও শেষ ৬টি চরণের স্তবককে ষটক বলে
• এছাড়া সনেটের অন্ত্যমিল ও ভাবের মিল আছে এমন চারটি চরণকে একত্রে চৌপদী, তিনটি পদকে ত্রিপদীকা বলে
• নির্দিষ্ট নিয়মে অন্ত্যমিল থাকে
• দুইটি স্তবকে যথাক্রমে ভাবের বিকাশ ও পরিণতি থাকতে হয়; ব্যাপারটাকে সহজে ব্যাখ্যা করতে গেলে তা অনেকটা এভাবে বলা যায়- প্রথম স্তবকে কোন সমস্যা বা ভাবের কথা বলা হয়, আর দ্বিতীয় স্তবকে সেই সমস্যার সমাধান বা পরিণতি বর্ণনা করা হয়
• সনেটের ভাষা মার্জিত এবং ভাব গভীর ও গম্ভীর হতে হয়
• সনেট মূলত ৩ প্রকার- পেত্রার্কীয় সনেট, শেক্সপীয়রীয় সনেট ও ফরাসি সনেট; এই ৩ রীতির সনেটের প্রধান পার্থক্য অন্ত্যমিলে। এছাড়া ভাব, বিষয় ও স্তবকের বিভাজনেও কিছু পার্থক্য আছে (তা ব্যাকরণের ছন্দ প্রকরণের আলোচ্য নয়)। নিচে ৩ প্রকার সনেটের অন্ত্যমিলের পার্থক্য দেখান হল-
পেত্রার্কীয় রীতি    ক+খ+খ+ক  ক+খ+খ+ক    চ+ছ+জ  চ+ছ+জ
শেক্সপীয়রীয় রীতি    ক+খ+ক+খ    গ+ঘ+গ+ঘ    চ+ছ+চ+ছ    জ+জ
ফরাসি রীতি    ক+খ+খ+ক  ক+খ+খ+ক    গ+গ  চ+ছ+চ+ছ
                    
উদাহরণ-

হে বঙ্গ, ভাণ্ডারে তব ∣ বিবিধ রতন;- ∣∣  (৮+৬)        ক
তা সবে, (অবোধ আমি!) ∣ অবহেলা করি, ∣∣ (৮+৬)          খ
পর-ধন-লোভে মত্ত, ∣ করিনু ভ্রমণ ∣∣ (৮+৬)            ক
পরদেশে, ভিক্ষাবৃত্তি ∣ কুক্ষণে আচরি। ∣∣ (৮+৬)                খ    অষ্টক
কাটাইনু বহু দিন ∣ সুখ পরিহরি। ∣∣ (৮+৬)             খ
অনিদ্রায়, অনাহারে ∣ সঁপি কায়, মনঃ, ∣∣ (৮+৬)         ক
মজিনু বিফল তপে ∣ অবরেণ্যে বরি;- ∣∣ (৮+৬)               খ
কেলিনু শৈবালে, ভুলি ∣ কমল-কানন। ∣∣ (৮+৬)                ক

স্বপ্নে তব কুললক্ষ্মী ∣ কয়ে দিলা পরে,- ∣∣ (৮+৬)         গ
ওরে বাছা, মাতৃকোষে ∣ রতনের রাজি ∣∣, (৮+৬)         ঘ
এ ভিখারী-দশা তবে ∣ কেন তোর আজি? ∣∣ (৮+৬)       ঘ    ষটক
যা ফিরি, অজ্ঞান তুই, ∣ যা রে ফিরি ঘরে। ∣∣ (৮+৬)           গ
পালিলাম আজ্ঞা সুখে; ∣ পাইলাম কালে ∣∣ (৮+৬)         ঙ
মাতৃভাষা-রূপ খনি, ∣ পূর্ণ মণিজালে । ∣∣। (৮+৬)        ঙ
                (বঙ্গভাষা; মাইকেল মধুসূদন দত্ত)

কবিতাটিতে দুই স্তবকে যথাক্রমে ৮ ও ৬ চরণ নিয়ে মোট ১৪টি চরণ আছে। প্রতিটি চরণে ৮ ও ৬ মাত্রার দুই পর্ব মিলে মোট ১৪ মাত্রা আছে।

অমিত্রাক্ষর ছন্দ :
• বাংলা ভাষায় অমিত্রাক্ষর ছন্দ প্রবর্তন করেন- মাইকেল মধুসূদন দত্ত
• অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রধান বৈশিষ্ট্য ভাবের প্রবহমানতা; অর্থাৎ, এই ছন্দে ভাব চরণ-অনুসারী নয়, কবিকে একটি চরণে একটি নির্দিষ্ট ভাব প্রকাশ করতেই হবে- তা নয়, বরং ভাব এক চরণ থেকে আরেক চরণে প্রবহমান এবং চরণের মাঝেও বাক্য শেষ হতে পারে
• বিরামচিহ্নের স্বাধীনতা বা যেখানে যেই বিরামচিহ্ন প্রয়োজন, তা ব্যবহার করা এই ছন্দের একটি বৈশিষ্ট্য
• অমিত্রাক্ষর ছন্দে অন্ত্যমিল থাকে না, বা চরণের শেষে কোন মিত্রাক্ষর বা মিল থাকে না
• মিল না থাকলেও এই ছন্দে প্রতি চরণে মাত্রা সংখ্যা নির্দিষ্ট (সাধারণত ১৪) এবং পর্বেও মাত্রা সংখ্যা নির্দিষ্ট (সাধারণত ৮++৬)
উদাহরণ-

                     তথা
জাগে রথ, রথী, গজ, ∣ অশ্ব, পদাতিক ∣∣  (৮+৬)
অগণ্য। দেখিলা রাজা ∣ নগর বাহিরে, ∣∣  (৮+৬)
রিপুবৃন্দ, বালিবৃন্দ ∣ সিন্ধুতীরে যথা, ∣∣  (৮+৬)
নক্ষত্র-মণ্ডল কিংবা ∣ আকাশ-মণ্ডলে। ∣∣  (৮+৬)
                     (মেঘনাদবধকাব্য; মাইকেল মধুসূদন দত্ত)

এখানে কোন চরণের শেষেই অন্ত্যমিল নেই। আবার প্রথম বাক্যটি চরণের শেষে সমাপ্ত না হয়ে প্রবাহিত হয়ে একটি চরণের শুরুতেই সমাপ্ত হয়েছে (তথা জাগে রথ, রথী, গজ, অশ্ব, পদাতিক অগণ্য)। এই অন্ত্যমিল না থাকা এবং ভাবের বা বাক্যের প্রবহমানতাই অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রধান দুইটি বৈশিষ্ট্য।

গদ্যছন্দ :
• এই ছন্দে বাংলায় প্রথম যারা কবিতা লিখেছিলেন তাদের অন্যতম- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
• মূলত ফরাসি বিপ্লবের পরবর্তী শিল্পমুক্তির আন্দোলনের ফসল হিসেবে এর জন্ম
• গদ্য ছন্দ সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন- গদ্যের মধ্যে যখন পদ্যের রঙ ধরানো হয় তখন গদ্যকবিতার জন্ম হয়
• পর্বগুলো নানা মাত্রার হয়, সাধারণত পর্ব-দৈর্ঘ্যে কোন ধরনের সমতা বা মিল থাকে না
• পদ ও চরণ যতি দ্বারা নির্ধারিত হয় না, বরং বিরাম চিহ্ন বা ছেদ চিহ্ন দ্বারা নির্ধারিত হয়; এই বিরাম চিহ্ন বা ছেদ চিহ্ন উচ্চারণের সুবিধার্থে নয়, বরং অর্থ প্রকাশের সুবিধার্থে ব্যবহৃত হয়
• গদ্যকবিতা গদ্যে লেখা হলেও তা পড়ার সময় এক ধরনের ছন্দ বা সুরের আভাস পাওয়া যায়
• গদ্যকবিতা গদ্যে লেখা হলেও এর পদবিন্যাস কিছুটা নিয়ন্ত্রিত ও পুনর্বিন্যাসিত হতে হয়
উদাহরণ-

আমার পূর্ব-বাংলা এক গুচ্ছ স্নিগ্ধ
           অন্ধকারের তমাল
অনেক পাতার ঘনিষ্ঠতায়
           একটি প্রগাঢ় নিকুঞ্জ
সন্ধ্যার উন্মেষের মতো
সরোবরের অতলের মতো
কালো-কেশ মেঘের সঞ্চয়ের মতো
বিমুগ্ধ বেদনার শান্তি
           (আমার পূর্ব বাংলা; সৈয়দ আলী আহসান)


সংগৃহীত: আমিন পরবাসী

বুধবার, ১৪ মে, ২০১৪

অমর যন্ত্রণা

অপেক্ষার বাঁধন ছিড়ে আসবেই সেই পূর্ণিমার রাত,
প্লাবিত করবে ধরণীর কালো; শীতল জ্যোৎস্না প্রপাত।
হাসির অন্তরালে গজিয়েছে যত মলিন বৃক্ষের শেকড়,
মাতাল নৃত্যে মাতবে সেদিন দেখে প্রতীক্ষিত চন্দ্রকর।
বিষন্নতায় ঢুলন্ত নয়ন সেদিন সজীব হবে মালশ্রীর সুরে,
সুখলতায় ছাওয়া আঙ্গিনায় ভাদ্দুরে বৃষ্টি ঝরবে অঝোরে।
 

নিরালস্যে স্নিগ্ধ শিশিরেরা জেগে থাকবে ভোরের দর্শনে,
চরণে তোমার লুটুবে তারা বিমোহিত রূপের আকর্ষণে।
অভিমান ভুলে নিস্তরঙ্গ নদীটি জেগে উঠবে উদ্দীপনায়,
সচতুর বাতাস উড়াবে কেশ তোমার ডেকে দ্যোতনায়।
পথভ্রষ্ট হবেনা তুমি আঁধারের ইন্দ্রজালে অতন্দ্র পাহারায়,
অঙ্গীকারের আড়ালে ভ্রমর বাধবে বাসা অতুল দক্ষতায়।

পাবে বিশল্যতা যার অপেক্ষায় ছিলে অশোক কাননে।
বিজিত মুকুটে নীলাচলে বসবে তুমি সম্রাজ্ঞী আসনে।     
সেদিন ক্রুশবিদ্ধ হবে সাফল্য তোমার তেজদীপ্ত সাধনায়,
হয়তোবা সেদিন তুমি পূর্ণতার হিসাব কষবে নির্ভাবনায়।
তবে জাগবে একদিন, ডাকবে সুনিপুন স্পর্শের যন্ত্রনায়,
ফেরা হবেনা আমার, মায়াময় সবুজে জেগে চিরনিদ্রায়।

মঙ্গলবার, ১৩ মে, ২০১৪

তিনটি অনুবাদ কবিতা

অভিশাপ
==============================

পথিক,পাশ কাটিয়ে যাও যদি অবহেলা করে
বজ্র আর শিলা যেন তোমার মাথায় ভেঙ্গে পড়ে।
অতিথি,তোমার মন যদি না ভরে এ পশরায়
বজ্র আর শিলা যেন ভেঙ্গে পড়ে আমার মাথায় ।
 
রুশ কবি রসুল হামজাটফ ।(অনুবাদ-আবুল হোসেন)

উপদেশ
==============================

এক বৃদ্ধ বাজ এক তরুণ বাজকে ডেকে বলে-
যাও বাছা,যাও উরে মহাশূন্যে,সানন্দে সোনার
ডানা মেলে। নিজের শিরার গনগনে আগুন জ্বলে
ওঠাই যৌবন।যাও যুদ্ধে, বিবাদে ঝরাও মধু
জীবনের চাক ভেঙে । যে আনন্দ ক্ষিপ্র ছোঁ-মারার,
সে মৃত পায়রার রক্তমাংসের জন্যে নয় শুধু ।

(অনুবাদ-আবুল হোসেন)


কতটুকু সোনা
========================

পাশের বাড়ীর সোনারু মশায়
কষ্টি পাথরে ঘষে বলে দেয়
এক মুহূর্তে অতি সহজেই
কোনটি সোনা, কোনটি তামার।

আমার লেখার হে সমঝদার
পাঠক, আপনি আছেন বলেই
জেনেছি আমার কাব্যের গহনায়
কতটুকু সোনা , খাদ-ই বা কোথায় ।

রুশ কবি রসুল হামজাটফ ।(অনুবাদ-আবুল হোসেন)
==================================


সংগ্রহে : আমিন পরবাসী ভায়া শ্রদ্ধেয় ছাইরাছ হেলাল। 

সোমবার, ১২ মে, ২০১৪

কাঠবিড়ালি

আমার সঙ্গে খেল্বি আয় ,
দৌড়ে অমন পালাস কেন
গাছ থেকে গাছে ডালপালায় ?
বন্দুক আছে আমার যেন,
গুলি ক’রে মেরে ফেলবো তোরে,
চেয়েছি যখন এইটুকুই
মাথাটা চুলকে দেবো শুধুই।
তারপর যাস দৌড়ে জোড়ে ।

(উইলিয়াম বাট্লা‌র ইয়েট্স‌) আবুল হাসান

সংগ্রহে : আমিন পরবাসী ভায়া শ্রদ্ধেয় ছাইরাছ হেলাল।

কবির স্বভাব

এক কবি তার বউয়ের জন্য লিখেছিলেন পদ্যঃ
সোনা আমার,মনি আমার, জীবনভরা মদ্য,
তুমি যখন আছে থাক লাগে কি যে ভালো।
চলে গেলে ফুরিয়ে যায় জীবন থেকে আলো ।

একটু পরে ঘরের মধ্যে এলেন কবির স্ত্রী,
তাকে দেখে কবির মেজাজ চড়লো বেজায়,কী,
আবার তুমি এলে কেন বাগড়া দিতে আজ?
দোহাই তোমার,দাও আমাকে একটু করতে কাজ।
 

রুশ কবি রসুল হামজাটফ ।(অনুবাদ-আবুল হোসেন)

সংগ্রহে: আমিন পরবাসী ভায়া শ্রদ্ধেয় ছাইরাছ হেলাল।

লোকালয়

মুদ্রাদোষের সমুদ্রে সাঁতার কাটতে গিয়ে হাঙ্গরের মুখে সম্মুখীন হয়েছিলাম, তাই বলে এতো সাধ করে খনন করা সমুদ্রে সাঁতার না কেটে কি পারা যায়?

মন্থর বাতাসের কুলগ্নে কুলঙ্গি থেকে দিন পঞ্জিকা নামিয়ে উল্টে যাচ্ছি উন্মীলিত করে রাখা পাতাগুলো, যতই উল্টাচ্ছি ততই সক্রিয় হচ্ছে ঘ্রাণেন্দ্রিয়, খুব চেনা সুঘ্রাণ ভেসে আসছে, না না পঞ্জিকার পাতায় কাটা দাগের মত পুরোনো নয় একদম সতেজ, সদ্য প্রস্ফুটিত গোলাপ সুভাষ। যতই উল্টে যাচ্ছি ততই নিকটে আসছে। শকুন্তলা নয়, নয় দুর্গামাতা,গত রাতে স্বপ্নে এসে হিম পরশে ছুয়ে যাওয়া পুষ্পবতী। জড়ীভূত হাত চেপে ধরে আতপ্ততায় ঠিক যেমনটি করেছিলো গতরাতে। লোকালয় দেখবো বলেই বাঁধা দেইনি কোনো, সাথে ছিলো স্বপ্নের মত না হারানোর প্রতিঙ্গা। কথা রেখেছে নিয়ে এসেছে কাঙ্খিত লোকালয়ে সময়ের দুর্দৈব দৈর্ঘ্য পার করে। পড়ি মরি করে তাকিয়ে দেখি বিচরিত সকল সুখকে পূর্ব জন্মের পর-হিংসা ভুলে।

নতুন নগরীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশে ভঙ্গি জানাছিলো না ধারাক্রমেই পরম আদরে বুকে টেনে নেই দেহারার ফুলেল বিছানায়। দুরুদুরু চিত্তে নিশ্বাস ফেলি ভাবি এই বুঝি স্বপ্ন ভেঙ্গে গেলো আবারো। তার তেরচা দৃষ্টির চাঁদরে ঢেকে যায় ভয়, জয় হয় চঞ্চরীকের। ঘর্মাক্ত কলেবরেই ঘুমিয়ে পরি তার বুকে মাথা রেখে তার নির্দেশে।

পাশ বালিশ হাত রেখে যখন আল মাহমুদের কাব্য সমগ্রের ছোয়া পেলাম না তখনি চিৎকার দিয়ে উঠি। না সে হারিয়ে যায়নি, আজ সে পাশবালিশে নয় ঘুমিয়েছে আমার বুকে।

উদীক্ষণ

ক্ষণজন্মা আজ তুমি অগ্নিজলে ডুববে, জানি-
পুড়বে তুমি, সাথে পোড়াবে জরাহীন আর্জুনি।
ঝরা পাতার স্তুপটি জ্বলবে দাউ-দাউ করে,
পোষা নক্ষত্ররা পালিয়ে যাবে বিকট চিৎকারে।
কেউ আসবেনা নিকষ আঁধারে জঞ্জাল পেরিয়ে-
অগ্নিজলে করবেনা সন্তরণ উদ্ধত বুকে জড়িয়ে।
প্রভাতের সঙ্কুচিত দৃষ্টিতে ঝরবে বিদ্রুপের লাভা,
ঊর্ধদৃষ্টিতে নিজেই নিজেকে হারাবে, বিলুপ্ত শোভা।

পালাচ্ছে তোমার সকল চন্দ্রধর, বৈরী জ্যোৎস্নায়-
বলেছিলো যারা আঁকবে তোমার মুখ পদ্মঈষীকায়।
কালো ধোয়ায় আচ্ছাদিত নির্মুক্ত নীল আকাশ,
প্রকম্পিত ধরণী! কি খুঁজছো? যন্ত্রণার নিকাশ?
ভয় পেয়োনা, আসছি, অগ্নিগর্ভেই বুকে জড়াবো।
পরিপুষ্ট বক্ষে পুষিত আগুনে আগুন পোড়াব।

মঙ্গলবার, ৬ মে, ২০১৪

নিকারাগুয়া (অনুবাদ কবিতা)

NIKARAGUA (নিকারাগুয়া)
===============================

Trees are lucky because they barely sense a thing.   
Stones, as well, because they’re hard, beyond all feeling.
No pain’s greater than the pain of being aware.
Human consciousness produces the worst despair.
To be, yet know nothing with no clear way to go,
the fear of having been, a future terror, too,
the unerring dread of being dead tomorrow,
and suffering through life and through shadows and through
the unknown and what one cannot anticipate,
the temptation of flesh, the fresh fruit still to come,
our tombs and the memorial laurels that await,
not knowing where we’re going
or even where we’re from!

===========================================
তরুরা সুখী কারণ তারা চেতনাহীন বললেই চলে :
নিরেট পাথর অনুভূতিহীন বলে আরো বেশি সুখী;
বাঁচার মত এত বিশাল যন্ত্রণা আর কিছুতেই নেই
জীবন্ত জীবনের মতো কোনো ভাড় এতো ভারী নয়।
জানি না এখনো কি হবো, অসচ্ছ পথে কোথায় যাবো
যেভাবেই হয়েছি তাতেই ভীত, যা হবে তাতেও আতঙ্ক।
আগামীকালই চিরবিদায়ের ভ্রমহীন বিভীষিকা, এবং
আজীবন যন্ত্রণার মাঝে, অন্ধকারের মাঝে এবং
অজানা পথে পার হয়ে যাওয়া, যা কিনা সন্দেহও করি না।
মৃত্যুর লোভ দেখিয়ে সতেজ ফলগুলো এখনো ডাকে ,
যে কবর অপেক্ষমান থাকে ধ্বংসকৃত্যের পবিত্রজলের।
আমরা জানি না আজ কোথায় যাবো
এমনকি জানি না আজ আমরা এসেছি কোথা থেকে!


মূল--রুবেন দারিও। 

অনুবাদ- আমিন পরবাসী। 

অযোগ্য সন্তান

মাতঙ্গী হয়ে আর তুমি নিশ্চুপ থেকো না, ধরনীতে নেই আর সেই কাপ্তান,
বেসামাল বাতাস তেড়ে আসছে মা, ঘুমিয়ে রয়েছে এখনো তোমার সন্তান।
পরমাদরে আগলে রেখে কি পেয়েছো সংসারে ছাড়া বিধূর ক্ষণ?

নির্মায়িক ধরনীতে বেজন্মা ছেলে নাঁচে দেখে তোমার ঝুলন্ত স্তন।
প্রতিমার সম্মুখেই সহোদরের পেট চিরে করে মাতাল নৃত্য অশঙ্ক চিত্তে,
পদ্মাকরে ভাসমান অসাড় দেহগুলোই তোমাকে বন্দী করে কলঙ্কের বৃত্তে।
দ্যাঁখো আর কেঁদো না, তুমি বরং সানন্দে আত্মহত্যা করো আজ,
যখন পারবেইনা ফিরে যেতে ষোড়শী যৌবনে মুছে কালো লাজ।  

তুমি বললে

তুমি বললে এক কথাতে
নয়ন বন্ধ করে,
স্টেডিয়ামের মাঝখানে
দাঁড়াব কান ধরে।


লজ্জা ভুলে সহস্রবার 
করে যাব উঠবস।
সাত সকালে চাইলে খাব
তিতা করলার রস।


হাসলে হাসুক জগৎবাসী
খদ দিবোযে নাকে।
ভুল হবেনা আর কোনদিন,
জীবন চলার বাঁকে।


তাতেও যদি মন না গলে,
না আসো আর ফিরে।
তাবিজ, কবচ করব তোমায়,

জ্বীনে রাখবে ঘিরে।

সুযোগ পেলেই মুচড়ে দিবে
ঘাড়ের বাঁকা রগ।
বুঝবে তুমি সেদিন ক্যামনে
ডিম পারে মোরগ।


বি: দ্র: বিপদের সময় হাসতে নেই।

শুক্রবার, ২ মে, ২০১৪

ধারা

নয়ন
অপরূপ, নিরুপম
চূর্ণ করে শিলা, ডাকে দ্যোতনায়
দেখেছি আমিও নিষ্পলকে
কাজলকালো সুবর্ণ।

প্রেম
বলধর, পবিত্র, অভ্রভেদী
বাঁচায় সুখে, মারে যাতনায়
পাবো না কি কখনো দেখা
জ্বলন্ত সুখের শেকড় ?

বিরহ
অশান্ত, নিষ্ঠুর, তপ্তময়
হত্যা করে জীবন্ত, দুঃখে হাসে
দেখেছে যে সেই জানে সে কত
হিংস্র প্রাণী।

স্মৃতি
অবিনাশী, অনন্ত
জাগে বারংবার, কাঁদায়,জ্বালায়
কখনো কি হবে না বিলুপ্ত
অসভ্য আকৃতি? 

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More

 
Design by প্রহেলিকা