বুধবার, ৩০ এপ্রিল, ২০১৪

প্রহেলিকার আত্মকথন -২

তোকে প্রবাহিত হতে দেখেছি তাদের শিরায় শিরায়, তোর ফেনিল পারদে বেদিক হয়ে কেউ কেউ নেমেছিলো কাল জলের প্রভাত স্নানে কিংবা মেতে ছিলো সূর্য অপেক্ষমান শিশিরের মুগ্ধতায়। দক্ষ শিকারীর ভঙ্গিমায় কেউ কেউ উপড়ে ফেলেছিলো উড়ন্ত পাখির শুভ্র পালক, হয়তোবা কারো দৃষ্টিক্ষুধায় ধূসর হয়েছিল সবুজ শেকড়। প্রলম্বিত হয়েছে কারো অন্ধরেখা তোর পর্ণমোচী সম্মোহনে। তাই বলে কি পেরেছিলি অমর হতে? কখনো ছুঁয়েছিলি সংকল্পের পর্বতচূড়া বিসর্পিত বাতেল্লায়?

জানি না, নিশ্ছিদ্র এই নিরেট দেয়াল টপকে কিভাবে সামনে এসে দাঁড়ালি, হৃদয়ের কার্নিশে বসত গেড়েছে অজস্র প্রাসাদকুক্কুট যারাই কিনা একদা আমাকে দমাতে পুঁড়িয়েছে আপন পাখা, অহর্নিশ করেছে পূঁজো শশ্মান ঘাটে।

অনুভূতি

উত্সর্গ: শ্রদ্ধেয় ছাইরাছ হেলাল কে, যিনি পাঠক হিসেবে আমাদের পাশে রয়েছেন বিস্তৃত আকাশের মত উদার হয়ে, এখনো শক্ত করে কলম ধরে রেখেছি তারই অনুপ্রেরণায়। তার সংস্পর্শেই রয়ে যেতে চাই। আমার এই ক্ষুদ্র লিখাটি আজ তাকেই উত্সর্গ করলাম। আর হ্যাঁ আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ লিখাটি হবে তার নামেই।

=============================================================================================

প্রস্তর চাপা ঘুমটি ভেঙ্গে গেলো মাঝরাতেই, আমার কাছে তা মাঝরাত হলেও বুড়ো হাবড়াটার কাছে ভর দুপুর মনে হবে না তা কিন্তু না। যক্ষায় আক্রান্ত হয়ে দিব্যি ঘোষণা দিয়ে যাচ্ছে জব্বারের বলীখেলার। ঘোষণা শুনে অকারণেই হাসতে হাসতে লুতুপুতু শুরু করলাম, খুলে দিয়ে বন্ধ দরজাটি তাকেও জানিয়ে দিলাম আমিও 'বাঁজে বীণ নাঁচে নাগিন-এর পুরনো ভক্ত, যাবো অবশ্যই যাবো।

নিশ্ছিদ্র মস্তিষ্কের অন্দরমহলে কোয়াশিয়াটি খুব দ্রুত বেড়ে উঠেছে, এই দিকে পঞ্চপ্রদীপ জ্বালিয়ে মোটা ঠোটে ঈশ্বরোপাসনায় নিজেকে সমর্পিত করার ভাব ধরেছি অপরাঙ্মুখ হয়ে। প্রার্থনা করবো আজ, করতেই হবে, এই ভেবেই কাঁচা সন্ধ্যাতেই পদ্মাসনে বসে পরি, পরক্ষণেই মনে পড়ল প্রতিজ্ঞার কথা। আর কি দেরী করা যায়? পদ্মাসন থেকে উঠেই দিলাম ভৌ-দৌড়, ঈশ্বরতো আর অবোদ্ধা নন, জানেন সবকিছু তাছাড়া তার কাছে কি প্রার্থনা করবো সেটা এখনোতো ঠিক করিনি।

একি!! সবাই দেখি পাঁঠার মত পাঁতি ধরেছে, আমার ঠাই কোথায়? না কোথাও ঠাই নাই। উর্মির নৃত্যে সিক্ত হতে এসে দূর থেকে তার গর্জন শুনেই আহ্লাদিত করতালি বাজিয়ে অনায়াসে এগিয়ে যাই মৃত্যুকুপের দিকে। মাথার উপর রেখে অখন্ড আকাশ, আমি নিষ্পলক তাকিয়ে রয়েছি নিচের আরোহীর দিকে। ডিপফ্রিজে রেখে হৃৎপিন্ডটি এখনি মেতে উঠবে অনুরঞ্জক হয়ে সবার মনোরঞ্জনে। শুরু হলো তার সচুতরতা। হঠাৎ নজরে আসলো গা ঘেষে দাড়িয়ে থাকা রমণীর প্রসন্নতা এবং তার পাশের জনের গলদশ্রু। আমিতো শিশুমুখে তাকিয়ে রয়েছি তাদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখে। আমি কাকে অনুকরণ করবো সেই ভাবনা থেকেই দিলাম উপরের দিকে হাত তুলে।

কপটতার প্লাবনে হারিয়ে ফেলেছি নিজেকে,
হারিয়েছি অনুভূতির সাথে আলিঙ্গনের স্বাদটুকু।
নেমে আসো অধ্রুব হয়েই অবিলম্বে কিংবা-
বাতাসে প্রেরণ কর তোমার সর্বশেষ ওহী,
জানিয়ে দাও সুখ দুঃখ প্রসবিত হয় কার গর্ভে?
কোথায় তাদের সুবিন্যস্ত করবো, কিভাবে?

জবাব পাবো না জেনেই বলেছিলাম দু চার বাক্য। থাকবো না চলে যাবো, থাকলেই কি লাভ কিংবা চলে গেলেইবা কি ক্ষতি? নিজেতো বুঝি না তাই পর্বাস্ফোটের ধ্বনিতেও জবাব মিলে না। স্বয়ংক্রিয় ভাবেই দু'পা চলতে শুরু করে বাতাসের ধূর্ত ইশারায়।

ধুলো পরা পালঙ্কে পিঠ লাগিয়ে রেখেছি সেই কখন থেকে, ঝুপড়ির ফুটো দিয়ে যখন জোত্স্না প্রবেশ করলো তখনই বুঝতে পারলাম না অনুভূতিগুলো  এখনো হারিয়ে যায়নি। তারা হারায় না, ছেড়ে চলে যায়। তাই এখনো দেখা যায় তাদেরকে পুরা-তাত্ত্বিক পোশাকে, অতন্দ্রহীন হয়ে ঘুরে বেড়াতে ঠাকুর বাড়ির আশেপাশে। বক ধার্মিক হয়ে তার অঙ্কোপরিতে বসে বিনে পয়সায় খপোতে চড়তে চায় নিস্তরণের আশায়। মাঝে মাঝে আবার দেখি তক্কেতক্কে থাকে শীতল চক্ষু তাতিয়ে আঁধারের কালী মার দিকে, কখন জেগে উঠবে অন্তর্বাহী হবে ঘুমনদী হয়ে। আবার দেখা যায় অমৃত প্রেমজল পান করে আশ্রিত হতে কারো 'অ' লেখার ছিন্নাংশে, সম্ভাবনীয়তা কাটিয়ে নির্ভাবনায় ভাবনার সাথে খাতির জমায় দু চুম্বকীয় চুম্বনে।
 
আর তাই আমিও আর তাদের ফিরিয়ে আনতে চাই না, চাই না ফিরে আসুক অক্রিয় অগাকান্তের এই শ্যাওলা আবৃত হৃদয় কোটরে।

শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৪

প্রহেলিকার আত্মকথন -১

হামাগুড়ি দিয়ে নয় খুঁজেছি তোকে বিদ্যুৎ গতিতে। অজ্ঞতার নগ্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বিস্তৃত সপ্রতিভ আঁধারে, কখনো কখনো কুমারী বিকালের গাঢ়ো নিশ্বাসের হর্ষে, খুঁজেছি মুয়াজ্জিনের ডাকে ছুটে গিয়ে পবিত্র প্রাঙ্গনে, হন্য হয়ে খুঁজেছি সন্ধির হাট-বাজারে, দিশেহারা হয়ে অজন্তের সরু পথের শেষ প্রান্তে পেয়েছি ধর্ষিত হলুদ পাহাড়, নীলাম্বরের বুক থেকে এক টুকরো নীল ছিনিয়ে এনে মেখে দিয়েছিলাম তার পূর্নাঙ্গে। ভেবেছিলাম এই সবুজের মাঝেই বুঝি খুঁজে পাবো তোর অনুরূপ, কিন্তু দুষ্কর বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের অভ্রভেদী রহস্যের অন্তরালেই রয়ে গেলি তুই।

আমার মত করে গোত্রের সকলেই খুঁজেছিলো তোকে। আমিও জেনে গিয়েছি তোকে আর খুঁজে পাবো না মৃত্যুর প্রসবের পূর্বে।

বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৪

ছায়া

-বালুঝড় দেখেছ কখনো?
-না'তো দেখিনি। তুমি দেখেছো ?
-না, আমিও দেখিনি তবে অনুভব করতে পারছি তোমার হাতের স্পর্শে।
-আমার হাতের স্পর্শে? কি বলছ তুমি এসব? আমার হাত যে তোমার হাতে বন্ধী।
-আমার হাতে তোমার হাত রয়েছে বলেই তো বুঝতে পেরেছি। ধমনীতে রক্ত সঞ্চালনের ধ্বনিই আমাকে জানিয়ে দিয়েছে তোমার বুকে কত উত্তাল ঝড় বইছে।

রবির শেষ কথাটি শুনে খানিকেই থমকে যায় ছায়া, এই মাত্র বুঝি সশব্দে বিস্ফোরিত হলো গোধুলির স্নিগ্ধ আলো বিলানো সূর্যটি। মুহূর্তেই অবরুদ্ধ অশ্রুর ফোয়ারা বইতে শুরু করে।

-আমাকে এখন যেতে দাও, আমি চলে যাবো।

অশ্রু মুছতে মুছতে বলে ছায়া।

-এই তোমাদের একটা সমস্যা, অল্পতেই চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরে, কিন্তু আমাকে দেখো এক ফোটা অশ্রুও ঝরেনি আজ অবধি, যন্ত্রণার তপ্তায় নিজেদের গুছিয়ে বরফ হয়ে তারা ভালই রয়েছে আজও।
-আমি এখন যেতে চাই, খানিক বাদে আঁধার নেমে যাবে, তুমিতো জানই আমি আঁধার নই আলোর সঙ্গী।
-হ্যাঁ, জানি বলেইতো বলছি' এখন তুমি যেতে পারবে না, সূর্যটি এখনো যে মাথার উপরে নীল আকাশকে রক্তাম্বর পরিয়ে দিব্যি হেসে যাচ্ছে। আঁধার নামার পূর্বে তুমি কিভাবে যাবে?

আবার ছায়া চুপসে গিয়ে হাঁটতে থাকে নাক বরাবর ধুলায়িত পথটি ধরে। কথার ফাঁকে কখন যে রবির হাতটি ছেড়ে দিয়েছে সে নিজেই টের পায়নি শুধু তার নিজের দ্রুত উঠানামা করা শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যাকুলতা ছাড়া। নিরবেই হেটে চলছে দু'জন, দু'জনের যেন একটিই আকাংখা, সূর্য ডোবার।

-কেমন আছো তুমি?

নিরবতা ভেঙ্গে দিয়ে ছায়া বললো।

-হা হা হা যাক শেষ বেলাতে এসে তাহলে জানতে চাইলেই কেমন আছি আমি! ভেবেছিলাম তুমি জানতে চাইবে না আমি কেমন আছি কারণ তুমিতো জানতেই সেই প্রথম থেকে আমি কেমন থাকবো। মনে আছে শেষ বারের পত্রটিতে তুমি বলেছিলে আমি নাকি অনেক ভালো থাকবো? আমি তোমার সেই বিশ্বাস আজও ভঙ্গ করিনি। আজও আমি তেমনি আছি যেমন তুমি চলে যাবার ঠিক পরমুহুর্তে ছিলাম।

-ভুলে যাওয়াই ভালো, যখন আর ফিরে যাওয়া যাবে না ফেলে আসা মুচড়ে যাওয়া দিনের কাছে। তখন কেনইবা আর মনে রাখা?

এই বলেই ছায়া চলে যেতে উদ্ধত্য হলে রবি তার হাতটি আচমকা শক্ত করে ধরে ফেলে। সাথে সাথে ক্ষুদ্ব হয়ে উঠে রবি। হঠাৎ ক্ষিপ্ত হয়ে যাওয়া রবি বুঝতেই পারেনি কোমল হাতের চুঁড়ি ভাঙ্গার শব্দ।

-তোমাকে না বললাম তুমি সূর্য ডোবার আগে যেতে পারবে না? তুমি কি বুঝতে পারোনি আমার কথা?? চুপ করে থাকো ব্যাস।

ছায়া পারলো না তার হাত থেকে নিজের কোমল হাতটি ছাড়াতে শুধু তাকিয়ে থাকলো ক্রোধে জ্বলজ্বল করা রবির চোখের দিকে।

-আমি চলে যাওয়ার পরও তুমি তোমার রাগকে দমাতে পারোনি? ভেবেছিলাম আমি চলে গেলে হয়তো ক্রোধের ইন্দ্রজাল থকে বেড়িয়ে আসতে পারবে তুমি, কিন্তু তুমি যে ঠিক আগের মতই রয়ে গেলে রবি। তোমার ক্রোধের পলিতে ভরাট নদীতে আমি সাঁতার কাটতে পারবোনা বলেই চলে গিয়েছিলাম।

-তুমি চাইলে কি পারতে না এই আগুনের ফুলকিকে তোমার শীতল বুকে নিয়ে ক্ষান্ত করে দিতে?
-আমি আর পুরোনো কথা মনে করতে চাইনা, আমার জন্য সবাই অপেক্ষা করছে আমাকে এখন যেতে হবে।
 

নিমিষেই রবি ছেড়ে দেয় ছায়ার কোমল হাতটিকে, সাথে সাথেই ছায়া হাটতে শুরু করে সামনের দিকে রবিকে পিছনে ফেলে। রবি চারদিকে তাকিয়ে দেখে খানিকটা অন্ধকার নেমে এসেছে ধরিনীতে। সূর্যটাও কখন যে অস্তে গেল টেরই পেলো না রবি। আঁধারের হালকা কুয়াশার মাঝে ছায়া মিলিয়ে যায়। সেখানেই স্থির ভাবেই দাড়িয়ে থাকে সে যেখানে ছায়ার হাত ছেড়ে দিয়েছিলো। তার মন বলছে ছায়া আবার ফিরে আসবে, ভাবতে ভাবতে দেখে জোত্স্নার আলোয় আলোকিত চারপাশ। একটি দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে রবিও ফিরে আসে আপন গন্তব্যে ছায়ার হাত ধরে।

মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৪

উনুন বিলাস

রাত্রির শেষ প্রহরেই ছুটে গিয়েছিলাম-
মাইগ্রেনের ব্যাথা বুক পকেটে রেখে নির্জনতার কোলে।
বৈশাখী কাব্যের শব্দফুল কুড়াতে কুড়াতে-
বেমালুম ভুলে গিয়েছিলাম আমি নই রজনীকান্ত কিংবা
নই কোনো অভিনেতা স্থিত রুপালি পর্দার।
হিরো নয়! সৌহার্দ্যের ভঙ্গিতে মুচকি হেসে নতশিরে
পাড়ি দিতে হবে উন্মুক্ত বক্ষের দাবিতে সুদীর্ঘ মানব বন্ধন।
আঁধারের প্রহসনে ভুলে গিয়েছিলাম, এই কালবেলাতে
জেগে উঠে সুউচ্চ দালানে পালিত মাতাল কুকুরেরা।
গাম্ভীর্য পবনে আত্মভোলা হয়ে দৃষ্টি চলে যায়
নৈশব্দের মাঝে ভেসে আশা গুন্জনরেখার শেষ বিন্দুতে।
নবোঢ়ার ঘোমটার আড়ালে সম্মোহিত নয়নে দেখি
আভিজাত্য মোড়ানো ছারপোকাদের উনুন বিলাস।

রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০১৪

সম্বোধন

দিব্যদৃষ্টিতে আপনাকেই দেখেছি দু'চোখের দুরত্বে।
দীপান্বিতার শহর ফেলে পাদবিক হিমানীর রাজত্বে,
জোত্স্নার আলোয় আধো রাতে ভাঙ্গা স্বপ্নের মাঝে,
সুখ কুঁড়াতে গিয়ে শৈলের চূঁড়ায় নির্লিপ্ত নগ্ন সাঁঝে,
কালো কেশের অমিয় সুভাষ বিলানো নীল আকাশে,
নুপুর পায়ে চঞ্চল নৃত্তে হৃদয় মাতানো ঘোর বরষে,
স্বপ্ন লতা ছেয়ে যাওয়ার সুখের যন্ত্রণার উন্মাদনায়,
এক চিলতে জোত্স্নায় আঁকা ক্যানভাসের আল্পনায়।
ছিপি ফুঁড়ে অব্যক্ত পঙতিগুলো সম্মুখে দন্ডায়মান,
হুনুরির কারুতে ঠাই দিবেন কি? রয়েছি অপেক্ষমান।

তুমি এখনো ঘুমোচ্ছ? আঁধার লুকিয়েছে সূর্যালোকে,
প্রশান্ত হৃদয়ে পাখপাখালি উড়ছে প্রণয়ের সর্বসুখে।
যুগলহাতে চলো আজ নগনদীতে ভাসবো অবেলায়,
খেলবো দু'জন নিরালাতে মৃদু আলোয় চন্দ্র দোলায়।
নিয়ে যাবো বসন্তপুরে যেখানে রয়েছে দুঃখের পরিত্রাণ,
মন্দানিলে খুলে উদাসী ঘোমটা করবো দু'জন ধারাস্নান।
চুম্বনের উষ্ণতায় হারিয়ে যাব কৌতুহলের অতলান্তে,
আনাড়ি নাবিক বাইবো তরণী কাম সমুদ্রের শেষপ্রান্তে।
উড়ে আসো নীল প্রজাপতি হয়ে বিশ্বস্ত প্রেম মন্দিরে,
মুচকি হাসির আলিঙ্গনে চলো না যাই সপুষ্পক বন্দরে।

দেখেছিস কত অবজ্ঞায় নিষ্কাশিত শুভ্র মেঘের অন্তর্বাষ্প,
চন্দ্রতাপে সুভাষ হারিয়ে বিদীর্যমান জোত্স্নালোভী সুপ্তপুষ্প।
গোধুলির সূর্য স্নিগ্ধতা কেড়ে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে আঁধারে,
সুরকন্যার লাজবন্তিতে ঝড় তুলে গম্ভীর অকূল পাথারে।
জোনাকি আলোর ইন্দ্রজালে জীবন্ত হয়ে উঠে স্থির চিত্রটি,
চুপিসারে এসে উষ্ণ আবেশে পড়ে শোনায় জ্বলন্ত পত্রটি।
উপড়ে ফেলবো আজ তোর লালায়িত ক্রুশ বক্ষ থেকে,
যবনিকা পতন হবে লাস্যমঞ্চে শেষনৃত্যের অপূর্ণতা মেখে।
ম্লায়মান আখিতে স্বপ্নরেখায় নাইবা নিলাম আর কাউকে জড়িয়ে,
আপনাকে নিয়েই নাহোক পথ চলা তোর মাঝে তোমাকে হারিয়ে। 

বুধবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৪

সুখ নির্ণয়

অনক্ষ বৃক্ষের ঝরে পরা স্বপ্নগুলো ভিড় জমায়,
সলাজে আবছা আলোতে তার মনের আল্পনায়।
নিরুদ্ধ যন্ত্রণার দুর্বিপাকে নিখোঁজ সুখের পরব,
মুদিত নয়নে আজ দুর্বিনেয় কষ্টের নীল বরফ।

অমর্ষের আড়ালে সতেজ স্বপ্নগুলো ছিল উচ্ছ্বাসিত,
অস্পর্শের যাতনে যারা আজ পথ হারিয়ে নির্বাসিত।
অহমের প্রচ্ছাদনে নিকষ দুর্বিগ্রহে আজ নিপিষ্ট প্রণয়,
সফেদ স্বপ্নগুলো ভাসে দিগ-দিগন্তে করতে সুখ নির্ণয়।

মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল, ২০১৪

তুই কি আমার দুঃখ হবি?

তুই কি আমার দুঃখ হবি?
এই আমি এক উড়নচন্ডী আউলা বাউল
রুখো চুলে পথের ধুলো
চোখের নীচে কালো ছায়া।
সেইখানে তুই রাত বিরেতে স্পর্শ দিবি।
তুই কি আমার দুঃখ হবি?

তুই কি আমার শুষ্ক চোখে অশ্রু হবি?
মধ্যরাতে বেজে ওঠা টেলিফোনের ধ্বনি হবি?
তুই কি আমার খাঁ খাঁ দুপুর
নির্জনতা ভেঙে দিয়ে
ডাকপিয়নের নিষ্ঠ হাতে
ক্রমাগত নড়তে থাকা দরজাময় কড়া হবি?
একটি নীলাভ এনভেলাপে পুরে রাখা
কেমন যেন বিষাদ হবি।

তুই কি আমার শুন্য বুকে
দীর্ঘশ্বাসের বকুল হবি?
নরম হাতের ছোঁয়া হবি?
একটুখানি কষ্ট দিবি।
নিজের ঠোট কামড়ে ধরা রোদন হবি?
একটুখানি কষ্ট দিবি।
প্রতীক্ষার এই দীর্ঘ হলুদ বিকেল বেলায়
কথা দিয়েও না রাখা এক কথা হবি?
একটুখানি কষ্ট দিবি।

তুই কি একা আমার হবি?
তুই কি আমার একান্ত এক দুঃখ হবি?


কবি- আনিসুল হক। 

রবিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৪

কার্পাসী কুবুদ্ধি

রুধিরাক্ত শরীরে রিঙ্গিত যুবকের সঞ্চরণ দেখেছি পর্বতশৃঙ্গে, 
সংকীর্তিত চেতনার অগ্নিশিখা বক্ষে ধরে নিপিষ্ট অঙ্গে। 
পরিশুষ্ক অধনের জ্বলন্ত চিত্রণ ইন্ধনে কুপোকাত প্রতিপক্ষ,
নবপল্লবের সান্তর গর্জনে দেখেছি নিষ্কলুষ বাংলার অন্তরিক্ষ।  

আজ দ্যাখো অবিরাম ভাসে আরতি গগনের অন্তর্দেশে
ধূসর বদনে সকাতরে রুদিত নীলাভ হারিয়ে অবশেষে।
বিশ্বজয়ী বালকের পিঙ্গলবর্ণ আখিতে দ্যাখো রাশভারী কালাশুদ্ধি 
শতরঞ্চি পেতে অন্তর্জগতে বসত গেড়েছে কার্পাসী কুবুদ্ধি।

রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৪

পালঙ্ক

যাক তাহলে অনেক বছর পর হলেও বাড়িটি আজ জাকজমকপূর্ণ হলো। মাছিদের ভোঁ ভোঁ করে শোক প্রকাশ করাটাই শুধু বিরক্তিকর।
পুরনো টিনের চালের ফুটো দিয়ে বৃষ্টি পড়ে বলে পালঙ্কটি সড়িয়ে নেয়া হচ্ছে দালান ঘরের ছাঁদের নিচে। পালঙ্কে পিঠ লাগানোর কথা আমারি ছিলো তাই এক পলক তাকাতে ভুলে যায়নি।
অদম্য কে দমন করে পিঠ লাগিয়ে পবিত্র পালঙ্কটিকে অপবিত্র করার হাত থেকে রক্ষা পেলাম কারণ যার জন্য আজকের এই শয্যা সে আমার অনেক প্রিয় মানুষ ছিলো এখন মনে হয় নেই, না অস্বীকার করে লাভ নেই এখনো সে প্রিয় মানুষ হয়েই রয়েছে এবং থাকবে।
তার কি হয়েছে? সারাজীবন নিজে একা একা গোসল করলো আজ দেখি কয়েকজন মিলেই তাকে গোসল করাচ্ছে!!!
আমার সহ্য হচ্ছে না একদম এসব।
তার জন্য নিরাপদ, যথোপযুক্ত স্থানেই এখন পালঙ্কটি।

অনুতপ্তের বারুদ

তুমি কি ভেবেছিলে খুব সহজেই দুমড়ে যাব? বিলীন হব?
তুমি কি ভুলে গিয়েছিলে আমি বাঁচি বক্ষে ধরে রুক্ষ প্রবাল?
দৈত্তহাসিতে কম্পমান আকাশে আমি নিরন্তর উড়াই ঘুড়ি?
অবয়বে মেখে উত্তপ্ত সূর্যাধুলি করেছি কত রৌদ্রবিলাস?

অতীতে আমার তিনকাল তুমিই জানতে! কি ভেবেছিলে?
মনে আছে কি নিতম্ব নেবুর সুভাষে আমি হইনি আত্মহারা?
বিদ্ধ হয়ে আমি করিনি সন্তরণ ছল ধরা আঁখির জলস্ফীতিতে?
উচ্চশির নত করিনি তোমার পুরন্ত যৌবনের জ্বলন্ত শিখায়?

পূঁজনীয় বিশ্বাস হাতে এসেছিলে গোধূলি বেলায় ফিরিয়ে দেইনি,
স্বখাদ সলিলে মুমূর্ষ তোমাকেই দেখিয়েছি গগনের উল্টো পৃষ্ঠা!
কিভাবে ভাবলে আমায় জ্বালাবে?আমিই জ্বালাই,পোড়াই, উড়াই!
আমার নয়!অনুতপ্তের বারুদ সেতো  জ্বলবে তোমার নিকুঞ্জে!

বুধবার, ২ এপ্রিল, ২০১৪

অজর তারুণ্যধর

কোথায় রয়েছে লুকানো অজর তারুণ্যধর অসংখ্য নীল শাখার ভিড়ে?
খুঁজি উন্মেষিত নয়নে দিক থেকে দিগন্তে নন্দিত মহীর বুক চিঁড়ে।
বিদাহী হৃদয়ে খুঁজি মাজুর প্রভাতে উড়ে চৌকস বিহঙ্গের পাঁখে,
মেলে না দেখা তার জানিনা জন্মে কোন অচিন কুল-শীল শাখে।
রাজ-রোগে শায়িত অসাড় রাজধানীতে দেখি ভরদুপুরে সূর্যাস্ত,
কালোমেঘে ঢাকা পরে পূর্নিমার আলো অভাজন মনে হয়ে পরাস্ত। 
কাঁজল পাখির অশ্রু ফোয়ারায় দেখি বিবর্ণ নীলসাগরের জল,
কিশলয় ঝড়ে পরে অযাচিত ক্রোধে দেখে শত পাথুরিয়া ছল।
মানমন্দিরেও মেলেনা তোমার খোঁজ, নিগৃহিত জীবন্ত শেঁকড়,
নিষ্করুণ অবহেলায়, তেজস্ক্রিয় মৃত্তিকার বুকে ব্যার্থতার আকর।



মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল, ২০১৪

উদাসী ডংকা বাজে জগৎ জুড়িয়া

ঘুম থেকে সকাল বেলায় উঠেই টুথব্রাশের উষ্ঠাগত প্রাণ দেখে দৌড়ে গেলাম নিচের লোকমান মিয়ার বউ-এর মুদির দোকানে (লোকমান মিয়া অসুস্থ তাই তার বউ দোকান পরিচালনা করে) । মুদির দোকানে টুথব্রাশ কিনতে গিয়ে শুনি দোকানে গান বাজছে, গানের কলিটা ছিলো এমন -
“আমি থাকি বাংলাদেশে তুমি থাক দুবাই,
মোবাইল দিয়া চুমা দিলে কোনো শান্তি নাই”
জিজ্ঞেস করলাম কি খালাম্মা সকাল বেলা এই গান ব্যপার কি ?
-আরে আর কইও না, ওই শালার (উনার স্বামী) যেই ব্যরামে ধরছে মনে হয় এইবার মরবো। আমার আর ভাল্লাগে না এই জ্বালা, তাই মনের দুক্ষে গান হুনি।
উনার উদাসী কথাটা শুনে আমি আর কথা না বাড়িয়ে চলে আসলাম, সবার মনেই তো যন্ত্রণা থাকে, গান শুনে যদি উনার যন্ত্রণা দূর হয় তাহলে আমার ক্ষতি নাই। তাই টুথব্রাশ নিয়ে বাসায় এসে অফিসে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে বের হয়ে গেলাম নাস্তা না করেই কারণ গ্যাসের সিলিন্ডার গতরাতে শেষ হয়ে যাওয়াতে গ্যাস চুল্লীর মুখটাও ছিল খুব উদাসীন। গ্যাস চুল্লীর উদাসীন মুখ দেখে আমার মা যখন বাবাকে বলল নুতুন সিলিন্ডার কিনে আনতে তখন বাবা হাস্যজ্জ্বল মুখটাতে উদাসীন ভাব নিতে কালক্ষেপন করলো না। যাইহোক আমি পালাই কারণ কখন যে আমি আবার এই জালে জড়িয়ে পরি তার কোনো ঠিক নাই।

অফিস খুব সন্নিকটে হওয়ায় পদব্রজেই পৌঁছে গেলাম। পৌছানোর সাথে সাথেই অফিস বয়কে ডাকলাম। সে আসলে দেখালাম তার মুখটাও একটু উদাসীন হয়ে আছে যাইহোক ক্ষুধায় পেট জ্বলে যাচ্ছে তাই আর কথা না বাড়িয়ে তাকে বললাম নাস্তা নিয়ে আয়, মেনুটাও বলে দিলাম কি আনতে হবে। সে যথা সময়ে নাস্তা নিয়ে আমার টেবিলে হাজির আজ। আজকের আগে তা কখনো হয়নি। এর আগে যতবারই তাকে দিয়ে নাস্তা আনিয়েছি প্রতিবারই সে গরম গরম নাস্তাকে ঠান্ডা করে আমার সামনে হাজির করেছে। আজকে তাকে ধন্যবাদ না দিয়ে পারলাম যখন দেখলাম নান রুটি থেকে গরম গরম ধোঁয়া বেরুচ্ছে।

-তুইতো অজ্যিয়া সেরহম খাম গড়ি ফেলাইয়্যুছ। এতো সড়ে সড়ে লইয়াচ্চুছ? ধৈন্যবাদ যা।

(তুই তো আজকে খুব ভাল কাজ করেছিস।এত তাড়াতাড়ি নিয়ে আসলি ? ধন্যবাদ )

-বদ্দা ন আনিলে কেন অইবো ? অনে আর বস ন না ?

(ভাই না আনলে কিভাবে হবে আপনি আমার বস না ?)

-আইচ্চা যা এহন।

(আচ্ছা যা এখন )

- বদ্দা ওগ্গু খতা হইয়্যুম না ?

(ভাইয়া একটা কথা বলবো?)

-আইচ্চ়ে

(আচ্ছা )

-বদ্দা রাতিয়্যা ওগ্গু কম আছিল টিয়্যা দিত ফারিবানা কিছু ?

(ভাইয়া কিছু টাকার দরকার ছিল রাতে একটা কাজ আছে ,দিতে পারবেন ?)

-কত ?

-১০০০টিয়্যা।

(১০০০টাকা)

তখন তাকে টাকাটা দিলাম। টাকাটা হাতে নিয়ে সে আমাকে বললো ::

-বদ্দা বহুত বড় উপকার ওইয়্যে গোডারাইত ইবার টেনসনে ঘুম যাইন্ন্য পারি।

(ভাইয়া বড় উপকার হলো, সারারাত এটার টেনশনে ঘুম যেতে পারিনি)

এই কথাটা বলেই সে চলে গেল সাথে সাথে গরম নাস্তার কথাভুলে ভাবতে লাগলাম কিরে মাত্র এক হাজার টাকার জন্য সে রাতে ঘুমাতে পারল না ? আর এই এই অল্প টাকাটার জন্যই তার মুখটা একটু আগে উদাসীন ছিলো। যাইহোক আগে খেয়ে নেই, এখনো অফিসের সব সহকর্মীরা আসেনি।

সকাল তখন ১০টা ৪৫ মিনিট।

হঠাৎ কাজের ফাকে মনে পড়ল আমার গার্ল ফ্রেন্ড মানে আমি যাকে ভালবাসি আর কি তার আজকে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার কথা। পরীক্ষা শুরু হবে ১১তা থেকে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সাথে সাথেই তাকে ফোন দিলাম। দুই’বার ফোন দেওয়ার পরও যখন ধরল না তখন বুঝে নিলাম ডাল ম্যা কুচ কলা হ্যায়। ভয়ে ভয়ে ছিলাম অনেক ক্ষণ না জানি পরীক্ষা শেষে কি প্রলাপ শুনতে হয়। ভয় তা বেশিক্ষণ থাকলো না যখন বস-এর কর্কশ গলা শুনতে পেলাম। বস ডাকছে

-জী বস?

-আপনাকে একটা কথা বলতে চাই যদি কিছু মনে না করো ?

-জী বস, নির্দ্বিধায় বলতে পারেন।

-কি যে বলতাম !! আমার ছোট ছেলেটার ইদানিং খুব অবনতি হচ্ছে ওকে এখন আর বাসায় রাখার কোনো উপায় নেই। ভাবছি ওকে কোনো মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে দিয়ে দিবো। তোমার কি কোনো অভিজ্ঞতা আছে কোথায় দিলে ভালো হবে? আমার এই একটা ছেলে মাত্র সে দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মাদকের ফাঁদে পড়ে।

বলতে বলতে দু’ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল তার চোখের কোণে।

আমি তাকে আশ্বস্ত করলাম যে “অশ্রু” মাদক নিরাময় কেন্দ্রটি ভালো হবে আর তাছাড়া সেখানে আমার এক পরিচিত মানুষের শরণাপন্ন হওয়া যাবে। শুনে তিনি খুসি হলেন এবং একটু পূর্বের সেই কালো ছায়াটা দূর হয়ে একটু মিষ্টি রোদের হাসি দেখা যাচ্ছে।

সময় চলে যাচ্ছে ঘড়ির কাটা দেখি একটু ভালো করেই দৌড়াচ্ছে আজকে। দুপুরের খাবার সময় হয়ে গেছে। খেতে যাব এমন সময় মোবাইলটা বেজে উঠলো। মোবাইলের পর্দায় প্রিয় বন্ধুর নামটি দেখাতে একটু ভালো লাগলো সকাল থেকে শুধু মানুষের উদাসীনতা দেখেছি ও আবার সবসময়ই একটু চঞ্চল টাইপের। যাইহোক ফোনটা ধরে শুনলাম বন্ধুর উত্তেজনাপূর্ণ কন্ঠ

-দোস্ত কই তুই?

-এইতো অফিসে, কেন কি হয়েছে ?

-আরে দোস্ত আর বলিস না সুমিকে(অর গার্ল ফ্রেন্ড) এই মাত্র দেখলাম অন্য একটি ছেলের সাথে কাজী নজরুল স্কোয়ারে ঢুকছে। তুই একটু আয় দোস্ত আমি যে পাথর হয়ে যাচ্ছি।

-আচ্ছা, আচ্ছা তুই থাক আমি আসছি।

এই বলে দুপুরের খাবারের প্লেটটি ফেলে পকেটভর্তি সান্তনার মালা নিয়ে রওয়ানা হলাম কারণ আমার আর কি করার আছে গিয়ে কতক্ষণ উদাসীন হওয়ার ভাব ধরে থেকে সেই সান্তনার মালা গলায় পরিয়ে দিব। রাস্তায় বেরিয়ে উদাসী ভর-দুপুরে সিএনজি না পেয়ে আগ্রাবাদ থেকে রিক্সায় উঠলাম। কিছুদূর যেতেই ট্রাফিক পুলিশের উদাসীনতায় পরলাম মস্ত বড় হা করে থাকা ট্রাফিক জ্যামে। টানা আধ ঘন্টা পর মুক্ত হয়ে কাজী নজরুল স্কোয়ারে গেটে গিয়ে দেখি বন্ধুটি ফুচকা দোকানের বেঞ্চে বসে আছে। কথা বলার কোনো সাহস করলাম না শুধু জেনে নিলাম যে তার গার্ল ফ্রেন্ড বর্তমানে উদাসীন ভালবাসায় মত্ত হয়ে পার্কের এক কর্ণারে বসে আছে সদ্য উদিত প্রেমিকের পিঠে পিঠ লাগিয়ে। আমিও একটু গিয়ে দেখে আসলাম হ্যাঁ ঠিকই আছে সেটা সুমি। ফিরে এসে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সান্তনামালা তার গলায় পড়িয়ে তাকে নিয়ে গেলাম দূপুরের খাবার খেতে। এক প্রকার জোর করেই তাকে খাওয়ালাম। খাবারের বিল দিয়ে বের হয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম আজকে আর অফিসে যাব না কারণ বন্ধুটিকে একটু সময় দেওয়া দরকার কারণ ভুলে যায়নি যে আমি প্রথম প্রেমে ছ্যাঁকা খাওয়ার পরে সে আমাকে যথেষ্ট সময় দিয়েছে।

বন্ধুরা এখানে প্রায় সবাই আছে। খুব ভালো আড্ডা জমেছে এখানে। এমন সময় হন্তদন্ত হয়ে আড্ডা খানায় এসে হাজির এলাকার বড় ভাই। তাকে সন্মান জানাতেই হয়। তাকে সন্মান জানানোর লক্ষ্যে সবাই যেন একসাথে দাঁড়িয়ে একই সুরে সালাম জানালাম। কিন্তু বড়ভাই যে দেখি আজ অন্যদিনের মত ভাব নিলোনা। মিষ্টি সুরের কন্ঠে:

-আরে বসে থাক তোরা। বড় হয়েছিতো কি হয়েছে ? আমিতো সবসময় তদের সাথে বন্ধুর মত চলাফেরা করি, তোদেরকে অনেক ভালবাসি।

আরেক বন্ধু মাঝখান থেকে বললো :

-ভাই আজকে হঠাৎ এইখানেই চলে এলেন আপনি না এসে আমরা বললেই তো আমরা চলে যেতাম।

-সামনে দিয়েই যাচ্ছিলাম তুদেরকে পাব এখানে জেনে ভাবলাম একটা খবর দিয়ে যাই। আগামীকাল সকালে একটু তোরা সবাই থাকিসতো। কালকে একটা মিটিং আছে সেখানে আমরা একটা মিছিল নিয়ে যোগ দিব। আমি চাই অন্যদের চেয়ে আমার মিছিলের লোকসংখ্যা একটু বেশি হোক।

এইগুলো শুনার পর তাকে আশ্বস্ত করলাম আমরা সবাই যাব যদিও জানি কেউই যাব না আমরা। তিনিও চলে গেলেন সানন্দে তবে আমাদের আড্ডাটা যে বিষাদময় করে দিয়ে গেছেন সেটা এখন সবার মুখের দিকে তাকালেই বুঝা যায়। ঠিক এমন সময়ই মোবাইলে আসল ম্যাসেজ:

Tumi kivabe parle amake sokale call na diye thakte ? ami onek koshto peyechi. Tumar call na paoate amar exam valo hoyni ekhon amar mon khub kharap.

হলো তো এবার?? কি আর করা সাথে সাথে ফোন দিয়ে তার দোষ স্বীকার করে তার গলাতেও সান্তনার মালা পরিয়ে দিলাম।

সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হল আর এই সময়টাতে কত যে উদাসীনতা দেখেছি সেটা লিখতে গেলে পাঠকরা উদাসীন হতেও দেরী করবেন না। রাতে বসে বসে ভাবছিলাম আমরা প্রতিদিন কত কিছুতেই না উদাসীনতা দেখি। আজকাল রক্তের সাথে বিষাক্তভাবে এই উদাসীনতা মিশে গেছে আমাদের।আমরা বুঝতে চাই না যে এই উদাসীনতার প্রতিফলনে আমরা আমাদের নিজেদের পরিচয় ভুলে যাচ্ছি। ভালোভাবে তাকিয়ে দেখলে লক্ষ্য করা যায় কত মানুষের বিচরণ আমাদের চারপাশে আর সবাই যেন নিজেকে উদাসীনতার সাগরে ডুবিয়ে রাখতেই ভালবাসে। কিন্তু সেটা কেন ? তাতে কি লাভ???

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More

 
Design by প্রহেলিকা