শনিবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৪

ছোটগল্প লেখার নিয়মকানুন (সংগৃহীত)

সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ ছোটগল্প। এর মাধ্যমে লেখক মানব জীবনের সেই অংশ তুলে ধরেন যা শাশ্বত জীবন আর মানবতাবোধের মূর্ত কিংবা বিমূর্ত ছবি। ছোটগল্পকে কোনো সংজ্ঞার নিয়মকানুনে বাঁধা যায় না। এর বিচরণ বহুমাত্রিক। তারপরও এর একটি রূপ তুলে ধরার জন্য আমরা প্রায়ই রবিঠাকুরের ‘সোনার তরী’ কাব্যগ্রন্থ থেকে ‘বর্ষাযাপন’ কবিতার সেই পঙ্ক্তিগুলো স্মরণ করি যেখানে বলা হয়েছে: ‘ছোটো প্রাণ, ছোটো ব্যথা ছোটো ছোটো দুঃখ কথা নিতান্তই সহজ সরল- সহস্র বিস্মৃতিরাশি প্রত্যহ যেতেছে ভাসি, তারি দু-চারিটি অশ্রুজল। নাহি বর্ণনার ছটা ঘটনার ঘনঘটা, নাহি তত্ত্ব, নাহি উপদেশ- অন্তরে অতৃপ্তি রবে, সাঙ্গ করি মনে হবে শেষ হয়ে হইল না শেষ।’ রবিঠাকুর এই কথাগুলো বলেছেন, ১২৯৯ বঙ্গাব্দের ১৭ই জ্যৈষ্ঠ। আজও ছোটগল্পের বিষয়ে আলোকপাত করতে গিয়ে আমাদের কবিতার এই পঙ্ক্তিগুলোর উল্লেখ করতে হয়। প্রকৃতপক্ষে ছোটগল্প জীবনের একটি খণ্ডিত অংশ...

ছোটগল্পের প্লট ও চরিত্র নির্মাণের কৌশল (সংগৃহীত)

ছোটগল্পের প্লট ও চরিত্র নির্মাণের কৌশল (সংগৃহীত)  পন্ডিত মাহী ৫ অক্টোবর, ২০১২ ========================================== ছোটগল্পের প্লট ও চরিত্র নির্মাণের কৌশল সফল প্লট নির্মাণের কৌশল:একটি ভালো গল্পের মূল ভিত্তি প্লটের সফলতার উপর নির্ভর করে। বলা যায়, পাঠক একটি জমজমাট গল্প পড়ে যখন অভিভূত হন তখন এটিই প্রমাণীত হয় যে, লেখক খুব সফলভাবে কাজ করে সার্থক প্লট নির্মাণে দক্ষতা দেখিয়েছেন। সফল প্লট নির্মাণের কয়েকটি কৌশল আছে। যেমন:   ক) সাসপেন্স বা অনিশ্চয়তা খ) পরিণতির পূর্বাভাস গ) অতীতের কথা বা স্মৃতিচারণ ঘ) গল্পের কাঠামো ঙ) অবাক করা সমাপ্তি।ক) সাসপেন্স বা অনিশ্চয়তা: ছোটগল্প শুরু করতে হবে আকস্মিক একটি কথা বা ঘটনার সূত্রপাত দিয়ে যা পড়ে প্রথমে পাঠক চমৎকৃত হবেন ও গল্পের ভেতরে অজানা-অনিশ্চিত কী আছে তা জানার জন্য আগ্রহী হবেন। তাঁর ভেতরে গল্পের সম্পূর্ণ কাহিনী জানার জন্য একধরনের তাগিদ...

মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট, ২০১৪

তার শয্যার পাশে

শুয়ে আছে একজন নিরিবিলি ভোরের শয্যায়শীত-গোধূলির শীর্ণ শব্দহীন নদীর মতনশিথিল শরীর তার লেগে আছে ফ্যাকাশে চাদরে,দেয়ালে আলোর পরী। খোলা দরজা। ঘরে ঠাণ্ডা হাওয়াখেলা করে, ঝরনা-হাওয়া ঝরে,ঝরে একমাথা চুলে, ঝরেকরুণ ক্লান্তির ভারে বুজে-থাকা চোখের ওপর।পাখা নেড়ে, শিস দিয়ে হলদে পাখি উড়ে গেল মেঘেনির্জন বারান্দা থেকে। সারা ঘরে শান্তি স্তব্ধতার,কখনো হঠাৎ তার নিমীলিত শুকনো গলা শুনিছায়া-ছায়া-আলো-স্বর-হয়তো ডেকেছে জল দিতে।শিরশিরে হাওয়ায় কাঁপে শরীরের মেরুন র‍্যাপার।চৈতন্যের আলো পড়ে ঘুম-পাওয়া সত্তার পাপড়িতে,সূর্যের চুমোয় লাল পাণ্ডু গাল। টেবিলের দুটিতরুণ কমলালেবু চেয়ে আছে দূরের আকাশে,চিকন সোনালি রুলি ম্রিয়মাণ শঙ্খশাদা হাতেযেন বেদনায় স্থির-মনে হল-সেই দুটি হাতমায়াবী নদীর ভেজা সোনালি বালিতে আছে প’ড়ে!ফ্লাস্কে দুধ। শিশি। ওডি-কলোনের ঘ্রাণ উন্মীলিতসারা ঘরে। পেশোয়ারি বেদানার...

জর্নাল, শ্রাবণ (কবি শামসুর রাহমান)

তুমি আসবে না নিঃশব্দে নিঃসঙ্গ এই চেনা বাগানের দরজা খুলে ফাল্গুনের বিহ্বল দুপুরে মাড়িয়ে ঘাসের পিঁপড়ে, শুকনো পাতা  সিঁড়ির নির্জন বাঁক ঘুরে এসে শিশিরের মতো স্বেদকণা মুছে মিহি রুমালে,  হাওয়ায় প্রীত তুমি মৃদু টোকা দেবে না দরজায়; গানের গুঞ্জনে আর উঠবে না ভরে দক্ষিণের শূন্য ঘর প্রহরে প্রহরে। যে-চোখে ফুলের ঝাড়, ফলের গুচ্ছের ভার দেখি সেই চোখ চোখই থাকে অনাদি,, সাবেকি; যখন তোমার দিকে চাই, চোখ আর চোখ নয়, থরথর কম্পিত হৃদয়। দুপুরের ছায়া মনে হালকা পর্দা তুলে তুমি এসে দাঁড়ালে কি পিঠ-ছাওয়া চুলে? শুধু ভুল ভেঙে দিতে ঘরময় বয়ে গেল বেনামি নিঃশ্বাস। বাতাসের ঘূর্ণি নাচে বাগানের শুকনো পাতা ওড়ে পথে, পিচে- তরতর সিঁড়ি বেয়ে সূর্য নামে পশ্চিমের, দোতলার নিচে মশকের ভারে কুঁজো ভিস্তি, জলোচ্ছ্বাস। ভেজা ঘাস। যাকে ভুলি, যোজন-যোজন দূরে যে যায় হারিয়ে তাকে হাতড়িয়ে আনা...

শেষ চরণ

বাকহীন বৃক্ষের তৃষ্ণার্ত ছাঁয়া জানেজানে বুকে শয্যা পাতা নিখাদ ধুলো,কতবার গিয়েছি ছুটে প্রাচীন পথেবেলা অবেলায় বিদ্রুপের ধুম্রজালে।যে পথের আঁচলে বেঁধে আধখানা চাঁদহিরন্ময় উদাসে নামায় শামুক রাত,সন্ধ্যালোকে তার শাড়ির ভাঁজে ভাঁজেআহত জোনাকিরা করে প্রেম অনুবাদ।দাঁড়ায়নি কখনো ক্লান্ত দু’পা সমান্তরাল,থামেনি জুয়াড়ি বেসাতি আবেগের প্রস্থ মাপে।তবুও সে পথ গড়িয়ে গড়িয়ে মিশে যায়কোন এক অচেনা বিন্দুতে, মায়াময় প্রভাতেছোঁয়া হয় না পথ কবিতার শেষ চরণ।...

দেবদাস (শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়)

প্রথম পরিচ্ছেদ  একদিন বৈশাখের দ্বিপ্রহরে রৌদ্রেরও অন্ত ছিল না, উত্তাপেরও সীমা ছিল না। ঠিক সেই সময়টিতে মুখুয্যেদের দেবদাস পাঠশালা-ঘরের এক কোণে ছেঁড়া মাদুরের উপর বসিয়া, শ্লেট হাতে লইয়া, চক্ষু চাহিয়া, বুজিয়া, পা ছড়াইয়া, হাই তুলিয়া, অবশেষে হঠাৎ খুব চিন্তাশীল হইয়া উঠিল; এবং নিমিষে স্থির করিয়া ফেলিল যে, এই পরম রমণীয় সময়টিতে মাঠে মাঠে ঘুড়ি উড়াইয়া বেড়ানোর পরিবর্তে পাঠশালায় আবদ্ধ থাকাটা কিছু নয়। উর্বর মস্তিষ্কে একটা উপায়ও গজাইয়া উঠিল। সে শ্লেট-হাতে উঠিয়া দাঁড়াইল। পাঠশালায় এখন টিফিনের ছুটি হইয়াছিল। বালকের দল নানারূপ ভাবভঙ্গী ও শব্দসাড়া করিয়া অনতিদূরের বটবৃক্ষতলে ডাংগুলি খেলিতেছিল। দেবদাস সেদিকে একবার চাহিল। টিফিনের ছুটি সে পায় না-কেননা গোবিন্দ পণ্ডিত অনেকবার দেখিয়াছেন যে, একবার পাঠাশালা হইতে বাহির হইয়া পুনরায় প্রবেশ করাটা দেবদাস নিতান্ত অপছন্দ...

Page 1 of 3412345Next
Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More

 
Design by প্রহেলিকা