শনিবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০১৪

কারো জীবন নিয়ে তামাশা নয়।

একটি ছোট ঘটনা আজ তোমাদের সাথে শেয়ার করব। বড় পোস্ট  কারোই  পড়তে ভালো লাগে না তাই চেষ্টা করব যাতে ছোট করেই তোমাদেরকে বলা যায়।

জীবনে কখন, কে, কার প্রেমে পরে যায় কেউ বলতে পারে না। প্রেম অথবা ভালবাসা যখন চোখের দৃষ্টির মাঝে থেকে শুরু হয় তখন কার দৃষ্টি কখন কার উপর পরবে কেউ তা জানে না। মেয়েটির নাম ধরে নিলাম বিন্ধ্যা। বিন্ধ্যাও একদিন একটি ছেলের প্রেমে পড়ে গেলো যেই ছেলে তারই সাথে একই ক্লাসে পড়ত। ছেলেটির নাম ধরে নিলাম হিমেল। বিন্ধ্যাও জানতো  হিমেল তাকে পছন্দ করে। হিমেলর চালচলন, চোখের চাহনি পছন্দ করার বার্তাটি বিন্ধ্যাকে পূর্বে জানিয়ে দিলেও ঐ  ছেলেটি আজও তার মুখ ফুটে বলে নাই। যদিও বিন্ধ্যা হিমেলকে পছন্দ করে তবুও বিন্ধ্যা চাইত  হিমেল এসেই তাকে ভালো লাগার কথা প্রথম প্রকাশ করুক। কিন্তু হিমেলও এসে তাকে বলে না। চলতে থাকে দুজনের মাঝে চোখে চোখে তাকিয়ে থেকে অপেক্ষা করা। এভাবেই দিন যেতে থাকে কিন্তু কেউ  আর কাউকে বলে না।

এইদিকে অরণ্য নামের একটি ছেলে বিন্ধ্যার দিকে প্রতিদিন তাকিয়ে থাকতে থাকতে একসময় প্রেমে পড়ে  যায় বিন্ধ্যার। অরণ্য ছিলো এলাকার বখাটে ছেলেদের মাঝে একজন। একদিন অরণ্য সাহস করে বলেই দিল বিন্ধ্যাকে যে, সে তাকে ভালবাসে। বিন্ধ্যা এতদিন হিমেলের জন্য অপেক্ষা করেছিল কখন আসে বলবে।  অপেক্ষা করতে করতে হিমেলের প্রতি তার একটা অভিমান জন্মায়। আর সেদিন অরণ্য বিন্ধ্যার কাছে তার ভালবাসা প্রকাশ করার পর হিমেলর প্রতি তার অভিমানের কারণে অরন্যের প্রথম প্রস্তাবেই সাড়া দেয় বিন্ধ্যা। অরণ্যকে সে পছন্দ না করলেও হিমেলের প্রতি অভিমানীই ছিলো অরণ্যের প্রস্তাবকে মেনে নেওয়ার একমাত্র কারণ।

সময়ের স্রোতে একটি বছর কেটেগেলো অরণ্য আর বিন্ধ্যার। এরই মাঝে বিন্ধ্যা অরণ্যকে জানালো একদিন হিমেলের প্রতি তার অভিমানের কথা এবং সেই অভিমান থেকেই অরণ্যকে সে ভালোবেসেছে।হিমেলের সাথে অভিমান করে অরণ্যকে ভালোবাসলেও বর্তমানে বিন্ধ্যা যে তাকে সত্যি ভালবাসে সেটাও বিন্ধ্যা জানালো। আর অরণ্য তাকে দ্বিতীয় বার বিন্ধ্যাকে বিশাস করে ভালবাসতে থাকলো।

কিছুদিন পর পারিবারিক সমস্স্যার কারণে বিন্ধ্যার বাবা তাকে ওই শহর থেকে অন্য শহরে নিয়ে চলে যায়। নুতুন শহরে যাওয়ার কিছুদিন পর অরণ্যকে সে জানালো যে , বিন্ধ্যা এখন কোনো ধরনের সম্পর্ক নিয়ে ভাবতে চায়  না , এখন সে শুধু তার লেখাপড়ার দিকে মনোযোগী হতে চায়। অরণ্য তার কথা শুনে আকাশ থেকে পরলেও যেহেতু জোর করে ভালবাসা হয়না সেহেতু বিন্ধ্যার সিদ্ধান্ত সে মেনে নেই. বন্ধ হয়ে যায় তাদের যোগাযোগ।

৬ মাস পর>>>>>>

একদিন বিন্ধ্যা অরণ্যকে ফোন করে জানালো সে অরণ্য কে ভুলতে পারবে না এবং সে অরণ্যকে অনুরোধ করে বললো যে আমাকে আগের মত করে ভালবাসার জন্য। অরণ্য তার ভালবাসার মানুষটিকে ফিরে পেয়ে মহা খুশিতে আবার শুরু হলো তাদের মাঝে যোগাযোগ।

পুরনো সব অতীত ভুলে চলতে থাকে তাদের ভালবাসা। ভালবাসায় অন্ধ আজ দুজনে। যদিও কারো সাথে কারো দেখা নেই শুধু  টেলিযোগাযোগ ছিলো  তাদের একমাত্র মাধ্যম। একদিন অরণ্য বিন্ধ্যাকে বললো  চল ওই মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে সাক্ষী রেখে আমরা দুজন দুজনকে স্বামী স্ত্রী হিসেবে কুবুল করে নেই. বিন্ধ্যাও সেদিন তাতে রাজী  হয়ে দুজন দুজনকে কুবুল করে নেয়।

এর কিছুদিনের মধ্যেই জীবনকে প্রতিষ্ঠিত করা এবং নিজের পরিবারকে সুখে সাচ্ছন্দে রাখার উদ্দেশে অরণ্য চলেগেলো বিদেশে তবে বিন্ধ্যাকে সব জানিয়েই গেল সে। বিন্ধ্যার তাতে কোনো অমত ছিল না। পারি জমালো  বিদেশের মাটিতে। বাবা, মা, বোন, বিন্ধ্যা সবাইকে ছেড়ে বিদেশে গিয়ে খুব অসহায় হয়ে পড়ল অরণ্য। চোখের জল যেন তার নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে উঠেছে। বিদেশ যাওয়ার ১৫ দিনপর অরণ্য একদম অসহায় হয়েই আর্তনাদ করতে থাকে একা একা কারণ তার যে আর এই বিদেশের কষ্ট সহ্য হচ্ছিল না। সেদিন ঠিক রাত ১২টায় বিন্ধ্যাকে সে কল দিল কিন্তু বিন্ধ্যা কার সাথে যেন কথা বলছিল। অনেকক্ষণ চেষ্টা করার পরও বিন্ধ্যা তার ফোন ধরল না।  আর সেই অভিমানে তাদের মাঝে অনেকদিন যোগাযোগ বন্ধ ছিল। অনেকদিন পর বিন্ধ্যা নিজে আসে যখন ঐ দিন রাতে ফোন না ধরাটা তার ভুল হয়েছে স্বীকার  করলো তখন অরণ্য সব ভোলে গিয়ে তাকে আবার আপন করে নিল। 

প্রবাস জীবন চলছে আর সাথে চলছে শত নাটকীয়তা। অরণ্য তার জীবনের সাথে যেন যোদ্দ্ধ শুরু করলো। ঐদিকে অরন্যর পরিবারের অবস্থাও খুব খারাপ হয়ে পড়ল। ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ল অরণ্য প্রায় অনেক টাকা। এভাবেই ঝড়  নেমে আসলো অরন্যের জীবনে। কোনো আসা আর স্বপ্ন নাই  তার এখন। এত যোদ্ধের  মাঝে থেকেও বিন্ধ্যাকে তার ভালবাসা থেকে বঞ্চিত করেনি। চলছে অরন্যের ভালবাসা আর ঐদিকে চলছে ভালবাসা। 

প্রবাস জীবনের ২ বছর কেটেগেলো অরন্যের। তার অবস্থা যেন দিন দিন অবনতি হতে থাকলো। বাবা মা অসুস্থ সাথে অনেক টাকার ঋণ তাদের কিছুই যেন আর সহ্য করার মত না। এরই মাঝে বিন্ধ্যার সাথেও অরন্যের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। ইদানিং ঝগড়া ঝাটি লেগেই আছে আর এই ঝগড়াঝাটি যেন অরন্যের জীবনে মরার উপর খাড়া হয়ে দাড়ালো। 

এর কিছুদিন পর অরণ্য বুঝতে পারল বিন্ধ্যা তাকে এড়িয়ে চলছে। যদিও বিন্ধ্যার অনেক অবহেলা সহ্য করেও অরণ্য তাকে ভালোবেসে যাচ্ছিল।

একটি রাতের ঘটনা।

একদিন বিন্ধ্যা অরণ্যকে জানালো যে সে ফেইসবুকে আইডি খোলেছে। অরণ্যের কেমন জানি মনে হলো কারণ বিন্ধ্যার কম্পিউটার সম্পর্কে বেসিক জ্ঞান থাকলেও ফেইসবুক আইডি যে সে খুলতে পারবেনা সেটা সম্পর্কে সে ঠিকই জানত। অরণ্য বিন্ধ্যাকে জিগ্গ্শে করলো কে তার আইডি খোলে দিল তখন বিন্ধ্যা তাকে বলল তার একজন সহপাঠী যার নাম হিমেল। আর হিমেলই  তাকে সেই আইডি খোলে দেয়। 

যাইহোক আর বেশীকিছু লিখতে ইচ্ছা করছে না শুধু এটুকু জানাই তোমাদের আমরা সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে সাক্ষী রেখে একজন আরেকজনকে কুবুল করে বিদেশে আসার পর হিমেল মানে বিন্ধ্যার পুরনো ভালোলাগার মানুষ এসে  যখন জানালো যে সে তাকে খুব ভালবাসে তখন বিন্ধ্যা তার ভালবাসায় পরে যায় তার পুরনো অভিমান ভুলে। সার্থক হয়ে যায় হিমেল আর বিন্ধ্যার ভালবাসা। কেটে যায় বিন্ধ্যার অভিমান হিমেলের প্রতি।


সেই অভিমানের বলী হয় অরণ্য। হায়রে অরণ্য!!!!!!এভাবেই অরণ্য বিন্ধ্যার সাথে কাটিয়ে দেয় ৫টি বছর। আর এই ৫ বছরে বিন্ধ্যাকে অরণ্য বিশাস করেছিল যতবারই বিন্ধ্যা তাকে বলেছিলো  সে অরণ্যকে ভালবাসে। 

এভাবেই অরন্যের মত বিশাস করে নষ্ট হয়ে যায় অনেকের জীবন। 

পোস্ট টি বড় হয়ে যাচ্ছিল খুব তাই পরতা শেষ  করতে পারলাম না। আমি জানি শেষটা কেমন জানি খুব সংক্ষিপ্ত হয়ে গেল। আসলে ৫ বছরের সম্পর্কই যখন খুব সংক্ষিপ্ত ভাবে নষ্ট হয়ে যেতে পারে তাহলে আমার এই গল্প পারবে না কেন?

সমাপ্ত 

0 মন্তব্য:

Facebook Comments by প্রহেলিকা

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More

 
Design by প্রহেলিকা